রোহিঙ্গাদের জন্য নতুন মার্কিন সহায়তা ইতিবাচক: শরণার্থী কমিশনার

বেনারনিউজ স্টাফ
2018.09.25
ওয়াশিংটন ডিসি
180924-BD-rohingya-aid-620.jpg নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশন চলাকালে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮।
এফপি

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র অর্থ সহায়তার পরিমাণ প্রায় দ্বিগুণ করার ঘোষণা দেওয়ার বিষয়টিকে ইতিবাচ বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

গত সোমবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে রোহিঙ্গাদের সহায়তা প্রসঙ্গে এ ঘোষণা দেন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালি।

“যুক্তরাষ্ট্র শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ধরনের মানবিক সহায়তা দিয়ে আসছে। বলা যায়, এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বেশি অর্থ সহায়তা দিয়েছে। আশা করি এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি অন্যান্য দেশও এগিয়ে আসবে,” শুক্রবার বেনারকে বলেন শরণার্থী, ত্রাণ ও পুনর্বাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম।

এ প্রসঙ্গে মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বেনারকে বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা কার্যক্রমে যে অর্থ বরাদ্দ বাড়িয়েছে সময়ের প্রয়োজনে তা খুবই জরুরি ছিল। এটার পাশাপাশি হোস্ট কমিউনিটিতে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁদের ক্ষতিও যাতে পোষানো যায় সেজন্য তারা আর্থিক বিবেচনা করেছে। এটা অত্যন্ত ইতিবাচক।”

শরণার্থী ও স্থানীয়দের জন্য সহায়তা

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাড়তি ১৮৫ মিলিয়ন ডলারের নতুন অর্থ সহায়তা দেবে। এর মধ্যে সহিংসতার শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা উদ্বাস্তু এবং স্থানীয়দের জন্য ১৫৬ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রয়েছে।

এর ফলে ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ‘রাখাইন রাজ্যের সংকটের প্রতিক্রিয়ায়’ মার্কিন অর্থ সহায়তা ৩৮৯ মিলিয়ন ডলারে উন্নীত হলো।

হ্যালি জাতিসংঘ তদন্তকারীকে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদেও তুলে ধরার দাবি জানান।

“মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বার্মা ও বাংলাদেশের মধ্যে উদ্বাস্তু ব্যক্তি, শরণার্থী এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জীবন বাঁচাতে অন্যতম প্রধান সাহায্যদাতা হতে পেরে গর্বিত। এখনো অনেক কিছু করার দরকার আছে, তাই অন্যান্য দেশকেও সহায়তায় এগিয়ে আসতে হবে,” বলেন নিকি হ্যালি।

“এই নৃশংসতার সাথে জড়িতদের জবাবদিহির আওতায় আনা, সহিংসতার অবসান ঘটানো এবং গণমাধ্যমকে ওই এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার জন্য আমরা বর্মিজ সরকারকে নিয়মিত আহ্বান জানাচ্ছি,” বলেন তিনি।

অসহায় শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া ও তাঁদের দেখভাল করার জন্য বাংলাদেশের উদারতার খুবই প্রশংসা করেন রাষ্ট্রদূত।

দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা এখন বাংলাদেশের দক্ষিণ পূর্বের জেলা কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প ও আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছে, এর মধ্যে সাত লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী সহিংস নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে এসেছে।

গত মার্চ মাসে জাতিসংঘ ও তার অংশীদার এনজিওরা জানায়, মিয়ানমার থেকে পালিয়ে এসে বাংলাদেশের সীমান্ত বরাবর আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থী ও তিন লাখ ৩০ হাজার স্থানীয় অধিবাসীদের জরুরি প্রয়োজন মেটাতে একশ কোটি মার্কিন ডলার প্রয়োজন।

‘গণহত্যার’ অভিযোগ থেকে পিছিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র?

রোহিঙ্গাদের ওপর নির্বিচারে হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। এমনকি তাঁদের অনেক পরিবার কয়েক প্রজন্ম ধরে রাখাইনে বসবাস করলেও অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আখ্যা দিয়ে মৌলিক অধিকার ও নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

আগস্টের শেষের দিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গণহত্যার জন্য মিয়ানমারের সামরিক নেতাদের বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানায়। এই জাতিগত নিধনে ছয় কর্মকর্তা দায়ী বলে চিহ্নিত করেছে সংস্থাটি।

তবে সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলেছে, মার্কিন সরকারের এক নতুন তদন্ত প্রতিবেদনে রাখাইনের নৃশংসতাকে গণহত্যা বা মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে উল্লেখ করা হয়নি। এ প্রতিবেদনের একটি আগাম কপি পেয়েছে বলে জানায় রয়টার্স।

“জরিপটি থেকে দেখা যায় যে উত্তর রাখাইন রাজ্যের সাম্প্রতিক সহিংসতা ছিল চরম, বড় আকারে, বিস্তৃত এবং এর উদ্দেশ্য ছিল একই সাথে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে দেখানো ও তাঁদের ভিটেমাটি ছাড়া করা,” ২০ পৃষ্ঠার রিপোর্টের এই অংশটুকু উদ্ধৃত করেছে রয়টার্স।

রিপোর্টে আরও বলা হয় “সামরিক অভিযানের ধরন ও মাত্রা দেখে বোঝা যায় যে এটি ছিল সুপরিকল্পিত ও সমন্বয়কৃত।”

রোহিঙ্গাদের ওপর সামরিক অভিযান জাতিগত নিধন বলে মনে করেন অনেকে। এর ওপর এ নৃশংসতাকে গণহত্যা হিসেবে মার্কিন সরকারের পূর্ব ঘোষণা রয়েছে; যা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে ওয়াশিংটনকে একটা আইনি ভিত্তি দেবে বলে মনে করে রয়টার্স।

নূর খান বলছিলেন, “ইন্টারনাল যে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং যুক্তরাষ্ট্র করেছে তার মধ্য দিয়ে তারা অনেক হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ পেয়েছে। তারা ধর্ষণের ঘটনার প্রমাণ পেয়েছে। তাদের কাছে রিপোর্টও আছে কোন এলাকার কোন গ্রুপ কিংবা কোন সেনা কর্মকর্তা এসব ধর্ষণ কিংবা হত্যার সাথে জড়িত। এ ধরনের একটা তালিকা তারা প্রস্তুত করছে বলেও জানা যায়।”

“এ ধরনের একটি প্রেক্ষাপটে নতুন প্রকাশিতব্য প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের এসব ঘটনাকে জেনোসাইড হিসেবে উল্লেখ না করা কৌশলত কোনো বিষয় হতে পারে। তবে সেটা দুঃখজনক। কারণ তারা এটাকে গণহত্যা বলেছে। এখন আর সেখান থেকে পিছিয়ে যাওয়ার কারণ তো নেই,” বলেন তিনি।

ঢাকা থেকে প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন জেসমিন পাপড়ি।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।