রোহিঙ্গাদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ১২৭ মিলিয়ন ডলার সহায়তা ঘোষণা
2019.09.25
ওয়াশিংটন ডিসি

রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় প্রায় ১৩ কোটি মার্কিন ডলারের নতুন অর্থ সহায়তা দেবার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের অধিবেশন চলাকালে দেশটির পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয় বলে মঙ্গলবার এক বিবিৃতিতে জানায় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।
রোহিঙ্গাদের ফিরে যাবার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বানও জানায় দেশটি।
এদিকে রোহিঙ্গা সংকট অবসানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) যৌথ উদ্যোগে জাতিসংঘ সদর দফতরে আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক বৈঠকে মাহাথির এই আহ্বান জানান বলে এক বিবৃতিতে জানায় দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
ওই বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও উপস্থিত ছিলেন। বুধবার এক প্রতিবেদনে বাসস জানায়, শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জাতিসংঘের চলমান অধিবেশনে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় সুনির্দিষ্ট চার দফা প্রস্তাব উত্থাপন করবেন।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন অর্থ সহায়তা
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বিবৃতিতে জানানো হয়, বাংলাদেশে বসবাসকারী রোহিঙ্গা শরণার্থী, স্থানীয় নাগরিক এবং মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির মধ্যকার লড়াইয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারের নাগরিকদের জরুরি সহায়তা হিসেবে ১২৭ মিলিয়ন ডলারের বাড়তি অর্থ সাহায্য দেয়া হবে।
রোহিঙ্গাদের সহায়তায় অর্থ প্রদানকারী দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা শুরু হবার পর থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের সহায়তায় দেশটি ৬৬৯ মিলিয়ন ডলারের মানবিক সহায়তা দিয়েছে। যার সাথে যুক্ত হলো নতুন আরো ১২৭ মিলিয়ন ডলার।
বাংলাদেশে বর্তমানে প্রায় বারো লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। এদের মধ্যে প্রায় সাড়ে সাত লাখ এসেছেন ২০১৭ সালের আগস্টের পর।
রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেবার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাষ্ট্র তার সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
তবে “একা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে এই সংকট মোকাবেলার জন্য প্রয়োজনীয় সব অর্থ যোগান দেয়া সম্ভব নয়,” মন্তব্য করে জাতিসংঘের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানায় যুক্তরাষ্ট্র।
পাশাপাশি, রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও মর্যাদার সাথে স্থায়ী প্রত্যাবাসনের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
এছাড়া, বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গা শিশুদের মিয়ানমারের পাঠ্যসূচি অনুযায়ী পাঠদান করানোর জন্য বাংলাদেশকে সহায়তার আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, “এ প্রক্রিয়া ফিরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গা তরুণদের মিয়ানমারের মূল ধারার সাথে সম্পৃক্ত হতে সহায়তা করবে।”
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই এগিয়ে আসতে হবে: মাহাথির
জাতিসংঘের অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশ ও ওআইসির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক বৈঠকে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি ড. মাহাথির মোহাম্মদ আহ্বান জানান বলে মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানায় মালয়েশিয়ার প্রধামন্ত্রীর দপ্তর।
মিয়ানমারের পরিস্থিতি এখনো ভালো নয় মন্তব্য করে মাহাথির বলেন, “রাখাইনে অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যূত শিবিরে (আইডিপি) অনেক রোহিঙ্গা বসবাস করছেন, এবং দিনে দিনে তাঁরা উদ্যোমহীন হয়ে পড়ছেন।”
“এটা স্পষ্ট যে এই সংকট সমাধানে মিয়ানমার সরকার উদ্যোগী নয়। তাই এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কেই কিছু করতে হবে।”
মাহাথির মিয়ানমারের সমালোচনা করে বলেন, তাদের যদি রাখাইনে গোপন করার মতো কিছু না থাকে, তবে তারা সেখানকার পরিস্থিতি দেখতে জাতিসংঘ প্রতিনিধি ও সহায়ক সংস্থার কর্মীদের যেতে বাধা দিচ্ছে কেন?
উদ্যোগ নেবার পরেও দুইবার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া ব্যর্থ হবার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এর কারণ পরিস্কার। শরণার্থীরা প্রত্যাবাসনকে নিরাপদ মনে করছে না।
মিয়ানমারে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের সম্ভাব্যতা বিষয়ে মাহাথির বলেন, “এটা শুধু রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেবার মাধ্যমেই বাস্তবায়ন সম্ভব।”
রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর গণহত্যা সংগঠিত হয়েছে মন্তব্য করে মাহাথির রোহিঙ্গা নির্যাতনের সাথে জড়িতদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার দাবি জানা। এই পরিস্থিতিতে মাহাথির জাতিসংঘের সক্রিয় অংশগ্রহণেরও আহ্বান জানান।
জাতিসংঘে শেখ হাসিনার চার দফা
রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে সুনির্দিষ্ট চার দফা প্রস্তাব উত্থাপন করবেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের চলমান চলমান অধিবেশনে এই প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করবেন বলে জানায় বাসস।
তাঁর প্রস্তাবগুলো হচ্ছে: (১) রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন বিষয়ে কী প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে তা মিয়ানমারকে সুস্পষ্টভাবে জানাতে হবে।
(২) রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের উত্তর রাখাইন রাজ্যে গিয়ে সেখানকার পরিস্থিতি দেখানোর মাধ্যমে তাঁদের আস্থা অর্জন করতে হবে।
(৩) রাখাইনে আন্তর্জাতিক বেসামরিক পর্যবেক্ষক মোতায়েন করে রোহিঙ্গাসহ সবার নিরাপত্তা ও সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
(৪) মিয়ানমারকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে নিশ্চয়তা দিতে হবে যে, রোহিঙ্গা সংকটের মূল কারণ দূর করা হয়েছে।