রোহিঙ্গাদের জন্য হাসপাতাল তৈরি করবে মালয়েশিয়া
2017.10.03
ঢাকা

মালয়েশিয়া সরকারের সহায়তায় কক্সবাজারে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল নির্মাণে সম্মত হয়েছে বাংলাদেশ; যেখানে লাখ লাখ রোহিঙ্গা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে গাদাগাদি করে বসবাস করছে। এসব এলাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে কলেরা মহামারি আকার ধারণ করতে পারে বলে মঙ্গলবার হুঁশিয়ার করেছে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা, ইউএনএইচসিআর।
এদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া স্বত্বেও গত তিন দিনে নতুন ৩০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এছাড়া আরো ১০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য সীমান্তে অপেক্ষা করছে বলে মঙ্গলবার জানিয়েছে মিয়ানমারের গণমাধ্যম।
মঙ্গলবার মালয়েশিয়া সরকারের একটি দল স্বাস্থ্য ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক করেন। সেখানে করনারি কেয়ার ইউনিট এবং অপারেশন থিয়েটারসহ আধুনিক সুবিধাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয় বলে বেনারকে জানান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
বৈঠকে মালয়েশিয়া প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার ইদহামজুহরি মোহাম্মদ ইউনুস।
হাসপাতালটি কক্সবাজারের উখিয়ায় স্থাপিত হবার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে এটি খোলা হতে পারে।
“মালয়েশিয়ার সরকার কক্সবাজারের দুটি হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার প্রাথমিকভাবে তাদের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে। তারা এখন পাইলট প্রকল্প হিসাবে একটি হাসপাতালে নির্মাণ করবে,” বেনারকে বলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন পরিচালক কাজী এহসানুল হক।
এ প্রসঙ্গে মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েরে একজন মুখপাত্র মঙ্গলবার বেনারকে জানান, “হাসপাতালটি মূলত হবে অপারেশন থিয়েটার সুবিধাসহ একটি মিলিটারি ফিল্ড হাসপাতাল। এতে ১০০ শয্যা পর্যন্ত সুবিধা থাকতে পারে।”
“সেনাবাহিনীর ডাক্তার ও নার্সদের কক্সবাজারের মতো পরিস্থিতি সামাল দেবার ক্ষেত্রে ব্যাপক অভিজ্ঞতা রয়েছে, যেখানে গুলিতে আহত শরণার্থী ও ক্যাম্পের বিভিন্ন রোগে আক্রান্তরা রয়েছেন। আমরা প্রস্তুত রয়েছি, বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদন পাওয়ার সাথে সাথেই আমরা শুরু করতে পারব,” বেনারকে বলেন ওই মুখপাত্র।
এদিকে আগামী দুই থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে হাসপাতালের কার্যক্রম শুরু হতে পারে বলে জানান এহসানুল হক।
“আগামী ৫ অক্টোবর থেকে নির্মাণ সামগ্রী পৌঁছানো শুরু হবে,” বলেন তিনি।
রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত
আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফেরত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া স্বত্বেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনুপ্রবেশ বন্ধ হয়নি।
মঙ্গলবার নিজ কার্যালয়ে বেনারনিউজের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, “গত তিন দিনে প্রায় ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আমরা যখন মিয়ানমারের মন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করছি, তারা তখন সীমান্ত পার হচ্ছিল,”
মঙ্গলবার মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে একজন রোহিঙ্গা নিহত হন বলেও জানান তিনি।
পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে মন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা যুবক নুরুল ইসলাম বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির চকডালা ইউনিয়নের সীমান্তের শূন্য লাইনে কাছে তার গরু ঘাস খাওয়াতে নিয়ে গিয়েছিলেন।
এদিকে কক্সবাজারের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, আগে একাধিক সীমান্ত দিয়ে এলেও এখন মূলত শাহপরীর দ্বীপ ও কাটাখালী দিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা।
মানবিক সহায়তা সংস্থাগুলোর জোট ইন্টারসেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসজি) মঙ্গলবার জানিয়েছে, গত ২৫ আগস্ট থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত ৫ লাখ ৯ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে।
তবে রোহিঙ্গাদের ত্রাণ সমন্বয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) মোহাম্মদ মাহিদুর রহমানের ধারণা, গতকাল পর্যন্ত ৬ লাখের কাছাকাছি রোহিঙ্গা এসেছে।
তিনি বলেন, “প্রতিদিনই এই সংখ্যা বাড়ছে। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা রাখাইনে তাদের ওপর নির্যাতনের কথা বলছেন।”
এদিকে রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতিতে ভরসা করতে পারছে না বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গারা।
“আমরা তাদের বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি না তারা আমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। যদি তারা আমাদেরকে মানুষ বলে বিবেচনা করত, তাহলে আমাদের ঘরবাড়ি ও গ্রামগুলো ধ্বংস করতে পারত না,” টেলিফোনে বেনারকে বলেন মংডু থেকে আসা রোহিঙ্গা আব্দুর রহিম (৩৫)।
“তবে যদি তারা আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে, তাহলে আমরা আরাকানে ফিরে যেতে চাই,” বলেন তিনি।
তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কুয়ালালামপুর থেকে হাতা ওয়াহারি।