সীমান্তে স্থলমাইন স্থাপন বন্ধ করতে হবে: সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
2017.10.05
ঢাকা

মিয়ানমারকে অবশ্যই সীমান্তে স্থলমাইন স্থাপন বন্ধ করতে হবে এবং তাদের কোনো হেলিকপ্টার আকাশসীমা লঙ্ঘন করতে পারবে না। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশে সফররত মিয়ানমারের মন্ত্রী টিন্ট সোয়েকে স্পষ্ট করে এ বিষয় দুটো জানিয়ে দিয়েছেন।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে আলোচনাকালে গত মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বেনারনিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন।
পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তথ্যমতে, সহিংসতার কারণে গত ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমার ছেড়ে পালিয়ে আসার সময় কমপক্ষে দশজন রোহিঙ্গা সীমান্তে পুতে রাখা স্থলমাইনে নিহত হয়েছেন। রাখাইন সীমান্তের নাইক্ষ্যংছড়ি এলাকায় ঘটনাগুলো ঘটেছে।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চির দপ্তরের মন্ত্রী টিন্ট সোয়ে গত সোমবার সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা আসেন। তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠক করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানও এই বৈঠকে অংশ নেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে বেনারনিউজকে বলেন, “মিয়ানমারের মন্ত্রীকে আলোচনায় খুবই আন্তরিক মনে হয়েছে। আমি সীমান্তের শূন্য রেখায় স্থলমাইন স্থাপনের বিষয়টি উত্থাপন করি। তাঁকে সুস্পষ্টভাবে জানিয়ে দেই যে, আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী তাঁরা এটা করতে পারেন না।”
তিনি বিষয়টি নোট করে নিয়েছেন। বাংলাদেশের আপত্তির বিষয়টি তিনি তাঁর দেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।
গত ২৪ আগস্ট মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলা হয়। মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের দাবি আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা) সংঘবদ্ধভাবে ওই হামলা চালায়। এরপর রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর হামলায় পাঁচ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরত নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি মন্ত্রী টিন্ট সোয়েকে পাঠান।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযানের কারণে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদে প্রভাব রাখতে পারে বলে ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের একজন কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা প্যাট্রিক মারফি বলেন, “বার্মার (মিয়ানমার) নবীন গণতন্ত্র কঠিন সময় পার করছে। যেকোনো ধরনের শক্ত পদক্ষেপ প্রতিবেশী দেশগুলোকে জঙ্গিবাদের কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি করতে পারে।”
আকাশ সীমা লঙ্ঘনে উদ্বেগ
বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা আসতে শুরু করার পর থেকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশে নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে তিনবার ডেকে আকাশ সীমা লঙ্ঘনের প্রতিবাদ জানায়।
জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মাসুদ বিন মোমেন সম্প্রতি নিরাপত্তা পরিষদে বলেছেন যে, ২৫ আগস্টের পর থেকে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার ১৯ বার বাংলাদেশের আকাশ সীমা লঙ্ঘন করেছে। মিয়ানমারের প্রতিনিধি তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ করেননি।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আকাশসীমা লঙ্ঘনের বিষয়টি উত্থাপনের পর মন্ত্রী বলেছেন, জিপিএসের ভিত্তিতে তাঁদের হেলিকপ্টার ওড়ে। জিপিএসের ভুলের কারণেই আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে।”
“তারপরও আমি তাঁকে বলেছি, মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে আকাশ সীমা লঙ্ঘনের বিষয়ে বারবার আপত্তি জানানোর পরও তারা এ বিষয়ে কেন কোনো নজর দেয়নি। আমি তাকে এও বলেছি যে, আমরা শান্তিপ্রিয় জাতি এবং আমরা ধৈর্য ধরছি,” বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্যকারী সংস্থাগুলো জানিয়েছে, ১২ লাখ লোককে আগামী ছয় মাস সাহায্য করতে ৪৩৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ হয়ে সাহায্যকারী সংস্থাগুলোকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
আইওএম এর পরিচালক উইলিয়াম লেসি সুইং বলেন, “গত এক মাসে আসা পাঁচ লাখের মতো রোহিঙ্গার অধিকাংশই নারী ও শিশু। এদের অনেকের অবস্থাই ছিল আশঙ্কাজনক। তাৎক্ষণিক সহায়তা দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের পাশে না দাঁড়ালে এদের অনেকেরই মৃত্যু হতে পারত।”
পরিচালক বলেন, বাংলাদেশ এবং আইওএমসহ তার সহযোগীরা এখন যথেষ্ট আশ্রয়, খাদ্য, পরিষ্কার পানি, স্বাস্থ্যসেবা এবং লাখ লাখ শরণার্থীকে রক্ষা করার জন্য সংগ্রাম করছে। সংকটের শুরু থেকে পাঁচ সপ্তাহ অতিবাহিত হয়েছে, অর্থায়ন শুরু হয়েছে, কিন্তু আরও অনেক বেশি প্রয়োজন।