রাখাইন পরিদর্শনে যাবেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত

জেসমিন পাপড়ি
2017.10.09
ঢাকা
আরো অসংখ্য শরণার্থীর সাথে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তে শিশু কোলে নাফ নদী পার হচ্ছেন এক রোহিঙ্গা নারী। আরো অসংখ্য শরণার্থীর সাথে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্তে শিশু কোলে নাফ নদী পার হচ্ছেন এক রোহিঙ্গা নারী। ৯ অক্টোবর ২০১৭।
AFP

মিয়ানমারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শিঘ্রই সহিংসতা আক্রান্ত রাখাইন রাজ্য পরিদর্শনে যাবেন। সোমবার বিকেলে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় মিয়ানমারসহ ২৮ দেশের কূটনীতিকদের রোহিঙ্গা পরিস্থিতি অবহিত করার পর এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী।

তিনি বলেন, “মিয়ানমারের সরকার তাদের সীমান্ত সংলগ্ন পাঁচটি প্রতিবেশী দেশ, চীন, ভারত, বাংলাদেশ, লাওস ও থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতদের উত্তর রাখাইনে নিয়ে যাবে, সেখানকার পরিস্থিতি দেখার জন্য। আমাদের রাষ্ট্রদূতকেও আমন্ত্রণ করেছে। তিনি অবশ্যই যাবেন।”

পরিদর্শনটি কবে নাগাদ হতে পারে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কিছু না বললেও “এটা হয়ত দু-এক দিনের মধ্যে হবে” বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, গত ২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর নির্যাতন শুরু হলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ শুরু করার পরে বাংলাদেশে একাধিক কূটনীতিক ব্রিফিং হলেও এই প্রথমবারের মতো সোমবার এ বিষয়ক ব্রিফিংয়ে মিয়ানমারের প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ব্রিফিংএ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বন্ধে এবং রোহিঙ্গা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে আন্তর্জাতিক সহায়তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়েছে। একইসাথে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সঙ্গে জাতিসংঘকে যুক্ত হওয়ার আহ্বানও জানিয়েছে বাংলাদেশ।

সূত্র জানায়, মন্ত্রী কূটনীতিকদের বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য আমরা দুই পক্ষ একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয়ে একমত হয়েছি, কিন্তু বর্তমানে যেটি জরুরি ভিত্তিতে দরকার সেটি হচ্ছে আমাদের সমঝোতা প্রস্তাব সম্পর্কে মিয়ানমারের উত্তর।

ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনীতিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, “এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, রাখাইনে এখনো নির্যাতন বন্ধ হয়নি এবং সেখান থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে রোহিঙ্গারা এখনো বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে।”

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার পরিসংখ্যান তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “গত ২৫ আগস্ট থেকে আজ পর্যন্ত পাঁচ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।”

রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। অক্টোবর ০৯, ২০১৭।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী। অক্টোবর ০৯, ২০১৭।
নিউজরুম ফটো

১৯৯২ সালের চুক্তি গ্রহণযোগ্য নয়

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, মিয়ানমারের ইউনিয়ন মন্ত্রীর ঢাকা সফরটিকে বাংলাদেশ স্বাগত জানায় বলে কূটনীতিকদের জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ‘জোরপূর্বক বাস্তুহারা মিয়ানমারের নাগরিকদের’ ফিরিয়ে নেয়ার বিষয়টি মিয়ানমার নিজ থেকে তুলে ধরাকেও বাংলাদেশ স্বাগত জানিয়েছে।

এতে বলা হয়, “এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী কূটনীতিকদের জানান, ১৯৯২ সাল আর বর্তমান অবস্থা সম্পূর্ণ ভিন্ন। উত্তর রাখাইনে প্রায় অর্ধেকের মতো মুসলিম গ্রাম জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখনো সেখানে গ্রাম জ্বলছে। ফলে রোহিঙ্গাদের শনাক্তকরণ যদি ১৯৯২ সালের মতো তাদের নাগরিকত্বের ওপর হয়, তা বাস্তবসম্মত হবে না। এ কারণে বাংলাদেশ এসব রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে নতুন একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে। যেখানে নতুন পন্থায় এসব রোহিঙ্গাদের শনাক্তকরণের মাধ্যমে প্রত্যাবাসন করা হবে।”

“পরিবর্তিত পরিস্থিতি ও নতুন চ্যালেঞ্জের কারণে ১৯৯২ সালের সমঝোতা অনুযায়ী প্রত্যাবাসন এই সময়ে বাস্তবসম্মত নয় বলে আমরা তাদের জানিয়ে দিয়েছি,” সাংবাদিকদের জানান মাহমুদ আলী।

তবে নতুন সমঝোতায় ১৯৭৮-৭৯ এবং ১৯৯২-৯৩ সালের সমঝোতাকে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করার প্রস্তাবও রয়েছে বলে জানান তিনি।

অক্টোবরে মিয়ানমার যাবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মিয়ানমারে যাওয়ার তারিখ আগামী ২০-৩০ অক্টোবরের মধ্যে প্রস্তাব করা হয়েছে বলে প্রেস ব্রিফিংএ জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

তিনি বলেন “আমরা মিয়ানমারের উত্তরের অপেক্ষায় আছি। তাঁর সফরে বর্ডার লিয়াজো অফিস ও বর্ডার অ্যাগ্রিমেন্ট অন সিকিউরিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট নামে দুটি সমঝোতা স্মারক হওয়ার কথা রয়েছে।”

আবারও নৌকা ডুবি: ১৩ রোহিঙ্গার লাশ

রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা ফের কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদীতে ডুবে গেছে। এ ঘটনায় সোমবার সকাল ৯ টা পর্যন্ত সাবরাং ইউনিয়নে শাহপরীর দ্বীপের গুলারচর ও জালিয়াড়া থেকে ১৩টি মরদেহ উদ্ধার করেছে বিজিবি। এ ঘটনায় রাতে আরও ১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়।

উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা জানান, গত রোববার সন্ধ্যায় রাখাইনের নাইক্ষ্যংদিয়া এলাকা থেকে নারী, শিশুসহ ৫০ জনের বেশি রোহিঙ্গা ইঞ্জিনচালিত ওই নৌকায় করে টেকনাফে আসছিল। নৌকাটি রাত নয়টার দিকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের ঘোলারচর এলাকায় নাফ নদী ও সাগরের মোহনায় ঝোড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে ডুবে যায়।

টেকনাফ ২ বিজিবি’র অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এস এম আরিফুল ইসলাম বেনারকে জানান, “রোববার রাত সাড়ে নটা থেকে ১০টার দিকে শাহপরীর দ্বীপে নাফ নদীর ঘোলারচর পয়েন্টে একটি রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় রোববার রাত থেকে আজ সকাল ৯ পর্যন্ত ১৩টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।”

গত ২৯ আগস্ট থেকে ৮ অক্টোবর পর্যন্ত এ নিয়ে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে রোহিঙ্গাবাহী ২৫টি নৌকাডুবির ঘটনায় ১৪৭ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। এর মধ্যে ১৪৬ জনই রোহিঙ্গা। একজন বাংলাদেশি নৌকার মাঝি। নিহত রোহিঙ্গাদের মধ্যে ৭৯টি শিশু, ৪১ নারী ও ২৬ জন পুরুষ।

টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাইন উদ্দিন খান উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে বেনারকে জানান, “উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের তথ্যমতে এখনো ৩১ জন নিখোঁজ রয়েছে। তাদের খোঁজে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে।”

তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কক্সবাজার থেকে আবদুর রহমান।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।