বাংলাদেশ-মিয়ানমার নিরাপত্তা সহযোগিতা চুক্তি সই
2017.10.24
ঢাকা

আপডেট: ২৪ অক্টোবর, ইস্টার্ন টাইম জোন সন্ধ্যা ০৬:০০
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বাংলাদেশে অব্যাহত প্রবেশ ও বর্মি জেনারেলদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের হুমকির মধ্যেই মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও মিয়ানমার নিরাপত্তা সহযোগিতা সংক্রান্ত দুটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের দুটি বৈঠকের পর সমঝোতা স্মারক দুটি সই হয় বলে জানিয়েছেন মিয়ানমারে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব রিয়াদ হোসেন। তিনি জানান, "বুধবার সকাল ১০টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে নির্ধারিত আছে।"
রিয়াদ হোসেন বলেন, "নিরাপত্তা সংলাপ ও সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই করেন জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন ও মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. জেনারেল কিয়ো সোয়ে। আর সীমান্ত লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই করেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন।"
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু মঙ্গলবার নেপিদো থেকে বেনারকে জানান, "বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সাক্ষাতে মিয়ানমারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লে. জেনারেল কিয়ো সোয়ে জানান, ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য প্রস্তাবিত জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠন করা হবে।" অপু বলেন, "মিয়ানমারের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার আবারও জানানো হয়েছে যে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রাখাইন রাজ্যে ফিরিয়ে নেওয়া হবে।"
এ প্রসঙ্গে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, “বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের বাংলাদেশে অব্যাহত অনুপ্রবেশ বন্ধ এবং রাখাইন রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে মিয়ানমার সম্মত হয়েছে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশে প্রত্যাবাসিত নাগরিকদের খুব শীঘ্রই তাদের নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবর্তনের জন্য কফি আনানের সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে বলে অঙ্গিকার ব্যক্ত করে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।”
“প্রতি বছর একবার দুই দেশের বর্ডার গার্ড প্রধানদের সভা এবং প্রতি তিন মাস অন্তর রিজিয়ন লেভেল কর্মকর্তাদের মধ্যে সীমান্তে উদ্ভূত বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে নিয়মিত বৈঠক আয়োজনের সিদ্ধান্ত হয়,” বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচির অফিসের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী কিও তিন্ত সোয়ের ২ অক্টোবর ঢাকা সফরের পর এটিই বাংলাদেশি কোনো মন্ত্রীর প্রথম মিয়ানমার সফর।
সফরে মিয়ানমার মন্ত্রী তিন্ত সোয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রত্যাবাসন যাচাই-বাছাই করার জন্য দুই দেশের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে বাংলাদেশের প্রস্তাবে সম্মত হন। তিনি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব করেন বলে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী।
গত ২৪ আগস্ট আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামক জঙ্গি গোষ্ঠী মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকিতে একযোগে হামলা চালালে বার্মার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উত্তর রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরু করে। জাতিসংঘের হিসাবে এই অভিযানের ফলে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এই অনুপ্রবেশ এখনো অব্যাহত আছে।
কী আছে সমঝোতা স্মারকে?
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ডেস্কের মহাপরিচালক মনজুরুল করিম খান চৌধুরী বেনারকে বলেন, “নিরাপত্তা সংলাপ ও সহযোগিতা সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। নিরাপত্তা সংস্থাগুলো যখন নিজেরা আলোচনা করবে তখন যেকোনো নিরাপত্তা হুমকি দ্রুত ও সহজেই মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।”
কোন কোন সংস্থা কখন বৈঠক করবে এমন প্রশ্নের জবাবে মনজুরুল করিম খান চৌধুরী বলেন, "সেটা সমঝোতা স্মারক সংক্রান্ত টার্ম অব রেফারেন্সে উল্লেখ থাকবে। সীমান্ত লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকা ঘুনদুমে বিজিবি একটি লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করবে। আর মিয়ানমার ঘুনদুমের বিপরীত অঞ্চলে বর্ডার গার্ড পুলিশের একটি অফিস স্থাপন করবে। সীমান্তে কোনো সমস্যা হলে দুই অফিস সভা করে তা সমাধান করবে।"
সোমবার দুপুরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মিয়ানমার যান। প্রতিনিধি দলটি বুধবার দেশে ফিরে আসার কথা রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অবরোধের হুমকি
সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতিতে বলা হয়, রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর ওপর যে সহিংসতা চলছে তাতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলছে, ওই সহিংসতার পেছনে জড়িতদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, মিয়ানমারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার পদক্ষেপ নিতে যুক্তরাষ্ট্র নিজস্ব ও আন্তর্জাতিক আইন পর্যালোচনা করছে।
গত সপ্তাহে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতার জন্য বার্মার সেনাবাহিনীর জেনারেলদের দায়ী করেন।
মঙ্গলবার ওয়াশিংটন ডিসিতে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপূর্ব এশিয়া বিষয়ক উপ সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডব্লিউ প্যাট্রিক মারফি এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, “এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে সেখানে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে, আমরা এইসব ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও বার্মার (মিয়ানমার) অংশীদারদের সাথে সর্বাত্মকভাবে কাজ চালিয়ে যাব।”
“রাখাইনে আমরা যা দেখতে পাচ্ছি, তা হলো একটি সমন্বিত মারাত্মক আক্রমণের ঘটনা। সেখানে সহিংসতা ঘটেছে এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ওই সহিংতায় অনেক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী জড়িত ছিল,” এক প্রশ্নের জবাবে বলেন মারফি।
এর আগে ইউরোপীয় কাউন্সিল অব মিনিস্টার্স রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতার জন্য মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে দায়ী করে বার্মার জেনারেলদের ওপর ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত রাষ্ট্রে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। তা ছাড়া নিরপরাধ ব্যক্তিদের ওপর ব্যবহৃত হতে পারে এমন আশঙ্কায় ইউরোপীয় কাউন্সিল বার্মার কাছে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তারা মিয়ানমারের সঙ্গে সব ধরনের সামরিক সহযোগিতা স্থগিত করে বলেছে, এরপরও যদি রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ না হয় তাহলে বাড়তি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।