সু চিকে জঙ্গিবাদ সম্পর্কে সতর্ক করলেন বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
2017.10.25
ঢাকা

মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির সাথে দেখা করে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের দ্রুত ফিরিয়ে না নিলে তাদের কেউ কেউ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের আশ্রয় নিতে পারে।
আর সেই অবস্থা সৃষ্টি হলে পরিস্থিতির ওপর বার্মা বা বাংলোদেশ কোনো দেশেরই নিয়ন্ত্রণ থাকবে না বলেও দেশটির স্টেট কাউন্সিলরকে অবহিত করেন তিনি।
বুধবার মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে তাঁর অফিসে সাক্ষাৎ করে মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এসব কথা বলেন।
জবাবে সু চি বলেন, তার সরকার রাখাইন রাজ্য থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু বেনারকে বলেন, “মিয়ানমার স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তারা সু চির কার্যালয়ে প্রায় এক ঘণ্টা আলাপ করেন। আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।”
“স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁকে (সু চি) বলেছেন, আমরা সন্ত্রাসীদের কোনো রকমের আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবো না। তবে অনুপ্রবেশকারীদের দ্রুত ফিরিয়ে না নিলে তাদের কেউ কেউ সন্ত্রাস বা জঙ্গীবাদে জড়িয়ে পড়তে পারে।”
“তখন পরিস্থিতি বাংলাদেশ বা মিয়ানমার- কারও অনুকূলে থাকবে না বলে আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁকে জানিয়েছেন,” বলেন অপু।
মঙ্গলবার মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে শরণার্থীদের পুনর্বাসনের জন্য জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের বিষয়টিও সু চিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অবহিত করেন বলে জানান অপু।
তাঁর মতে, “সু চি জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের ব্যাপারে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গী ব্যক্ত করেন।”
অপু জানান, সু চি মনযোগ দিয়ে মন্ত্রীর কথা শোনেন ও বলেন, “যারা বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করেছে তাদের ফিরিয়ে নিতে তার সরকার কাজ শুরু করেছে। কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নেও কাজ করে যাচ্ছে তাঁর সরকার।”
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সু চিকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান। সু চি দু’দেশের সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফর করবেন বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানিয়েছেন।
রোহিঙ্গা শরণর্থীদের প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনার জন্য গত সোমবার আসাদুজ্জামান খানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল মিয়ানমার পৌঁছান। মঙ্গলবার প্রথমে সচিব পর্যায়ে সিনিয়র অফিসিয়াল’স মিটিং এবং পরে দুই দেশের মন্ত্রীর মধ্যে সভা অনুষ্ঠিত হয়। বুধবার রাতে দেশে ফিরেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
রাখাইন রাজ্যে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে, এবং পালিয়ে যাওয়া মিয়ানমার নাগরিকদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে দুই দেশ একমত হয় বলে সভার যৌথ ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়েছে।
মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের দুটি বৈঠকের পর সমঝোতা স্মারক দুটি সই হয়।
গত ২৪ আগস্ট আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) নামক জঙ্গি গোষ্ঠী মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর চৌকিতে একযোগে হামলা চালালে বার্মার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা অধ্যুষিত উত্তর রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরু করে। জাতিসংঘের হিসাবে এই অভিযানের ফলে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। এই অনুপ্রবেশ এখনো অব্যাহত আছে।
ভারত বাংলাদেশে ঠেলে দিলো ছয় রোহিঙ্গাকে
মেহেরপুর জেলার পুলিশ সুপার আনিসুর রহমান বেনারকে বলেন, “মঙ্গলবার মধ্যরাতে জেলার মুজিবনগর সীমান্ত দিয়ে ছয়জনের একটি রোহিঙ্গা পরিবারকে ‘পুশ’ করে বাংলাদেশে পাঠিয়েছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী।”
রোহিঙ্গা পরিবার প্রধান গণি পুলিশকে জানিয়েছেন, নির্যাতন থেকে বাঁচতে তারা প্রায় সাত মাস আগে রাখাইন থেকে ভারতের পাঞ্জাবে পালিয়ে যান। সেখান থেকে তাদের ধরে এনে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়।
“আমরা প্রথমে তাদের নিরাপদ হেফাজতে রাখি। আজ সন্ধ্যায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ তাদের নিয়ে গেছে। তাদেরকে কক্সবাজার জেলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রাখা হবে,” বলেন আনিসুর রহমান।
এটি ভারত থেকে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঠেলে দেয়ার দ্বিতীয় ঘটনা। এর আগে সাতক্ষীরা দিয়ে কমপক্ষে ১৬ জন রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়া হয়।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের পূর্বাসনে কাজ করছে নৌ-বাহিনী
বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুর্বাসন নিয়ে আলোচনা হয় বলে বেনারকে জানিয়েছেন কমিটির সদস্য কর্নেল ফারুক খান।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সমস্যা নিরসনের জন্য ইতোমধ্যে ১০ হাজার টয়লেট স্থাপন, খাবার ও ত্রাণ বিতরণ এবং তাদের জন্য অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি নিশ্চিত করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে বলে মেজর জেনারেল মোঃ সিদ্দিকুর রহমান কমিটিকে অবহিত করেন বলে সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
কমিটি সভায় উপস্থিত নৌ-বাহিনীর রিয়ার এডমিরাল এস. এম. আজম সদস্যদের জানান, ভাষানচরে রোহিঙ্গাদের পুর্নবাসনের জন্য নৌবাহিনী দ্রুত কাজ করে যাচ্ছে।
রোহিঙ্গা মেয়েদের সঙ্গে বাংলাদেশি ছেলেদের বিয়ে ঠেকাতে নির্দেশনা
রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা মেয়েদের সঙ্গে বাংলাদেশি ছেলেদের বিয়ে ঠেকাতে কক্সবাজারসহ তিন পার্বত্য জেলায় বিয়ে নিবন্ধনে আরও সতর্ক হওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।
বুধবার আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে বুধবার জারি করা এই নির্দেশনায় বলা হয়েছে, কাজী বা রেজিস্ট্রাররা নিবন্ধনের করতে বর ও কনে দুজনেই বাংলাদেশের নাগরিক কিনা তা জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে নিশ্চিত হয়ে বিয়ে নিবন্ধন করবেন।
“বাংলাদেশি ছেলেদের সাথে মিয়ানমার হতে আগত রোহিঙ্গা মেয়েদের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রবণতা লক্ষণীয় হারে বৃদ্ধি পাওয়ায়” জাতীয় পরিচয়পত্র দেখে বর ও কনের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়ার এই নির্দেশনা জারি করা হলো,” আদেশে বলা হয়।
অন্যথায় দায়ী নিকাহ সংশ্লিষ্ট রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে ‘কঠোর ব্যবস্থা’ নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে আদেশে।