রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের আহ্বান খালেদা জিয়ার

জেসমিন পাপড়ি
2017.10.30
ঢাকা
কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে এক রোহিঙ্গা শিশুকে কোলে তুলে নেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। কক্সবাজারের উখিয়ায় শরণার্থী শিবির পরিদর্শনকালে এক রোহিঙ্গা শিশুকে কোলে তুলে নেন বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। ৩০ অক্টোবর ২০১৭।
নিউজরুম ফটো

রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান ও তাঁদের নিরাপদে মিয়ানমার ফেরত পাঠানোর জন্য সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতি কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদারের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

সোমবার কক্সবাজারের উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ শেষে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমারের প্রতি আহ্বান জানান। একই সঙ্গে সংকট মোকাবিলায় সরকারের ভূমিকারও সমালোচনা করেন তিনি।

“যেভাবে রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত ছিল, সরকার সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি। বরং যারা রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করতে চায় তাদের পথে নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করছে,” সাংবাদিকদের বলেন খালেদা জিয়া।

জাতিসংঘ, ওআইসিসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করে খালেদা বলেন, “আপনারা অবিলম্বে এই সমস্যার সমাধানে এবং রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে কূটনীতিক তৎপরতা বাড়ান। রোহিঙ্গারা যাতে তাদের নিজের দেশে ফিরে যেতে পারে এবং নির্ভয়ে বসবাস করতে পারে, সে দায়িত্ব আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিতে হবে।”

খালেদা জিয়া উখিয়ার ময়নার গোনা, হাকিমপাড়া ও বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণ করেন। এ ছাড়া কক্সবাজারে ত্রাণ বিতরণ কাজের সমন্বয়ে থাকা সেনাবাহিনীর কাছে বিএনপির পক্ষ থেকে ১০ হাজার রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য ৪৫ ট্রাক ত্রাণ সামগ্রী হস্তান্তর করা হয়।

মঙ্গলবার খালেদা জিয়ার ঢাকায় ফেরার কথা রয়েছে।

ফেনীতে হামলা, পাল্টাপাল্টি দোষারোপ

২৮ অক্টোবর ঢাকা থেকে রওনা হওয়ার পরে ওই দিন বিকেলে ফেনীর ফতেপুর এলাকায় খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা।

বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার বেনারকে বলেন, “লাঠিসোঁটা নিয়ে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন দুর্বৃত্ত ম্যাডামের গাড়িবহরে অতর্কিতে হামলা চালায়। তারা সাংবাদিকদের গাড়িসহ অন্তত ১৫-২০টি গাড়ি ভাঙচুর করে। এ ঘটনায় সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মী আহত হন।”

বিএনপি এ ঘটনার জন্য যুবলীগ-ছাত্রলীগকে দায়ী করলেও আওয়ামী লীগ দায়ী করছে যুবদল-ছাত্রদলকে।

“পত্রিকায়, টিভিতে প্রকাশিত ছবিতে দেখলাম, এরা চিহ্নিত। খুব স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে, এরা সরকারি দল আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ অথবা যুবলীগের ক্যাডার। তাদের পরিচয়ও এসেছে,” বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এ অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, “আমাদের কাছে খবর আছে, পরিকল্পিতভাবে ছাত্রদল ও যুবদলকে দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়ে ছাত্রলীগ-যুবলীগের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে।”

তবে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সুজন এর সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বেনারকে বলেন, “আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোথায়? তারা কেন তাদের কাজটি করছে না। কেন তারা চুপ রয়েছে। এর সঙ্গে কারা জড়িত সেটা বের করা তাদের দায়িত্ব। সরকারের উচিত এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের মুখোমুখি করা।"

রাজনৈতিক ফয়দা

রোহিঙ্গা শরণার্থীদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশের উদ্দেশ্যে বিরাট গাড়িবহর নিয়ে রাজধানী ঢাকা ছাড়েন খালেদা জিয়া। দুদিন পর রোববার রাতে তিনি কক্সবাজারে পৌঁছান।

ফেনীতে তাঁর গাড়িবহরে হামলা হলেও ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত পথে পথে বিএনপি নেতা-কর্মীদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়।

সোমবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বেনারকে বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন পরে চেয়ারপারসনকে কাছে পেয়ে নেতা-কর্মীরা দারুণ উচ্ছ্বসিত ও উজ্জীবিত। তার প্রমাণ মিলেছে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে যাওয়ার পথে পথে। নেত্রীর সান্নিধ্য নিঃসন্দেহে নেতা-কর্মীদের চাঙা করবে। তাদের মনোবল বাড়াতে সাহায্য করবে।”

‘‘দীর্ঘদিন পরে খালেদা নেতা কর্মীদের মাঝে গেছেন, তার থেকে রাজনৈতিক ফয়দা তো আসবেই। তবে ত্রাণ দেওয়া একটি ভালো কাজ। এটা থেকে নগ্ন রাজনীতি যেন না হয়, সে বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে,” বেনারকে বলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার।

অনুপ্রবেশকারী ৬ লাখ ৭ হাজার

গত ২৫ আগস্ট রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত আছে।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রতিষ্ঠান আইওএম ও ইউএনএইচসিআর এর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত ৬ লাখ ৭ হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।