রোহিঙ্গা শিবিরে অস্ত্রের খোঁজে র‍্যাব

রোহিত ওয়াধওয়ানি
2017.10.30
কক্সবাজার
কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছেন নতুন আসা রোহিঙ্গারা। কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে সাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছেন নতুন আসা রোহিঙ্গারা। কক্সবাজার, ২৯ অক্টোবর ২০১৭।
রোহিত ওয়াধওয়ানি/বেনারনিউজ

রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া দুজন সশস্ত্র রোহিঙ্গা গ্রেপ্তারের পর র‌্যাপিড অ্যাকশান ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) শরণার্থী শিবিরগুলোতে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান শুরু করেছে।

গত সপ্তাহে দুজন রোহিঙ্গা অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ আটক হওয়ার পর গত শনিবার থেকে র‌্যাব উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী শিবির ও আশেপাশের এলাকায় অভিযান শুরু করে। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন র‌্যাব কর্মকর্তা মেজর রুহুল আমিন।

পুলিশ জানায়, শনিবার কয়েকজন রোহিঙ্গার ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বালুখালি শরণার্থী শিবিরে চার বাংলাদেশী নলকূপ মিস্ত্রি আহত হয়।

“আমরা গোলাগুলির শব্দও শুনেছি,” রুহুল আমিন বলেন।

ওই ঘটনায় দেশীয় অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ ইলিয়াস (২৫) ও নুর বাশার নামে দুজন রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়েছে।

“তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় আমরা কিছু ক্লু পেয়েছি এবং আমরা সেখানে টিম পাঠিয়েছি,” বলেন মেজর রুহুল আমিন।

তিনি বলেন, র‌্যাবের কাছে তথ্য ছিল উখিয়া ও টেকনাফ শরণার্থী শিবিরে কিছু শরণার্থী অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুকিয়ে রেখেছে।

প্রসঙ্গত রাখাইন রাজ্যে সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে প্রাণভয়ে পালিয়ে এসে উখিয়া ও টেকনাফে ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।

তবে রুহুল আমিনের মতে আটককৃতরা সম্ভবত সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠী আরসার সদস্য নয়।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো ক্যাম্প থেকে অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।

“ক্যাম্পগুলো ঘিঞ্জি অবস্থায়। তাই এখানে অপারেশন পরিচালনা করা খুব কঠিন,” বলেন রুহুল আমিন।

অপহরণ করে নিয়ে যাবার পর মুসলিম রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের দাগ দেখাচ্ছেন হিন্দু রোহিঙ্গা তাজল শীল। উখিয়া, কক্সবাজার। ২৭ অক্টোবর ২০১৭।
অপহরণ করে নিয়ে যাবার পর মুসলিম রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের দাগ দেখাচ্ছেন হিন্দু রোহিঙ্গা তাজল শীল। উখিয়া, কক্সবাজার। ২৭ অক্টোবর ২০১৭।
রোহিত ওয়াধওয়ানি/বেনারনিউজ

সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের হাতে হিন্দু নির্যাতন

সশস্ত্র রোহিঙ্গাদের হাতে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা হিন্দুরা নির্যাতিত হওয়ার এক মাসেরও বেশি সময় পরে ক্যাম্পগুলোতে অস্ত্র উদ্ধার শুরু করা হলো।

মুসলিম রোহিঙ্গাদের কুতুপালং ক্যাম্প থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে সাড়ে চারশোর মতো হিন্দু রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছেন।

হিন্দুদের অভিযোগ কুতুপালং ক্যাম্পে হিন্দুদের ধরে নির্যাতন করেছে সশস্ত্র রোহিঙ্গারা। তারা বলছে, রাখাইন থেকে পালিয়ে আসার সময় তারা ৩৫টি গরু সঙ্গে করে এনছিল।

হিন্দুরা সেই গরুগুলো রাখাইন রাজ্যে তাদের প্রতিবেশী মুসলিম রোহিঙ্গাদের কাছে ছয় লাখ টাকায় বিক্রি করে।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর সেই টাকা চাইতে গেলে তাদের কুতুপালং ক্যাম্পে নিয়ে অস্ত্রের মুখে নির্যাতন করে মুসলিম রোহিঙ্গারা। যে ১১ জন হিন্দু টাকা চাইতে গিয়েছিল, তাদের নয়জন ফিরে আসে। আর দুজন নিখোঁজ হয়।

“তারা আমাদের চোখ ও হাত বেঁধে কুতুপালং ক্যাম্পে নিয়ে যায় এবং সেখানে আট ঘন্টা ধরে নির্যাতন করে। আমাদের লাথি ও ঘুষি মারে। পানি চাইলে প্রসাব পান করতে বাধ্য করে,” বেনারকে বলেন ১৯ বছর বয়সী তাজল শীল।

তার ৩০ বছর বয়সী ভাই নিতাই শলী বেনারকে বলেন, “আমাদের চোখে ও মুখে কাপড় বাঁধার আগে তারা পিস্তল ও রাইফেল দেখায়।”

“বেলা চারটায় আমাদের ছেড়ে দেওয়ার পর দেখি রবীন্দ্র পাল ও নিরঞ্জন পাল নিখোঁজ,” বেনারকে বলেন মধুরাম পাল।

পুলিশ বলছে, কয়েকদিন পর কুতুপালং ক্যাম্প থেকে তিন মাইলের মধ্যে রবীন্দ্র পালের লাশ উদ্ধার হলেও নিরঞ্জন পাল এখনো নিখোঁজ।

“আমরা এখনো ভিকটিমের পরিচয় জানতে পারিনি,” তদন্তকারী কর্মকর্তা সাব-ইন্সপেক্টর আবুল কালাম বেনারকে বলেন। তিনি বলেন, এই তদন্ত এখন থমকে আছে।

ভুক্তভোগীরা বলতে পারছেন না কোথায় তাদের নির্যাতন করা হয়েছে, বলেন কালাম। ওই স্থান চিহ্নিত করা যায়নি।

জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর কর্মকর্তা জোসেফ সূর্যমনি ত্রিপুরা বেনারকে বলেন, কুতুপালং শরণার্থী শিবিরে মুসলিম ও হিন্দু রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিরোধের ব্যাপারে তারা সজাগ। সেখানে কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাও ঘটেছে।

তবে মুসলিম রোহিঙ্গারা হিন্দু নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

“কেন এক রোহিঙ্গা আরেক রোহিঙ্গাকে আঘাত করবে,” বেনারকে বলেন কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা মোহাম্মাদ আলম।

“এত ভীড়ের মধ্যে কি অস্ত্র আনা সম্ভব? ধরা পড়বে না?” তিনি বলেন।

তবে র‌্যাবের মেজর রুহুল আমিনের মতে অস্ত্র আনা অসম্ভব নয়।

“বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকা ঘন বন ও নদী-নালায় ভরপুর। দুদেশের সীমান্ত অনেকাংশেই অরক্ষিত। তাই যে কেউ লুকিয়ে অস্ত্র আনতেই পারে,” বলেন ওই র‍্যাব কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।