আরও দুটি নৌকাডুবি, সাত রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার
2017.10.31
ঢাকা ও কক্সবাজার

কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া অংশের সাগরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাবাহী আরও দুটি নৌকাডুবি হয়েছে। পৃথক দুটি ঘটনায় এখন পর্যন্ত নারী, শিশুসহ সাত রোহিঙ্গার লাশ উদ্ধার হয়েছে। এখনো নিখোঁজ অন্তত ১৫ জন।
মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের বাইল্যাখালী পয়েন্টে ও গতকাল সোমবার রাত ১০টার দিকে টেকনাফ সদর ইউনিয়নের মহেশখালিয়াপাড়া পয়েন্টে এ দুটি নৌকাডুবির ঘটনা ঘটে।
“মঙ্গলবার সকালে রোহিঙ্গা বোঝাই নৌকা ডুবির ঘটনায় ৩২ জনকে জীবিত এবং চারজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে,” বেনারকে জানান উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল খায়ের।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন খান বেনারকে বলেন, “সোমবার রাতে মিয়ানমার থেকে নৌকায় করে পালিয়ে আসার সময় তিন শিশুর মৃত্যু হয়েছে। তাদের উদ্ধার করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে দাফন করা হয়েছে।”
গত ২৯ আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফে রোহিঙ্গাবাহী ৩০টি নৌকাডুবির ঘটনায় ১৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতদের বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
স্থানীয় প্রশাসন বলছে, এসব ঘটনা প্রমাণ করে যে, রোহিঙ্গাদের আসা কমলেও পুরোপুরি থামেনি। গত ২৫ আগস্ট রাতে রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তা বাহিনীর স্থাপনায় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার ঘটনার পর মিয়ানমারের সেনাবাহিনী রাখাইনে নতুন করে দমন অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে।
পুলিশ জানায়, সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে টেকনাফের মহেশখালী পাড়া এলাকায় তিন শিশু এবং মঙ্গলবার সকালে উখিয়ার বাইল্যাখালি এলাকা সংলগ্ন সমুদ্র সৈকতে নারী ও শিশুসহ চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।
নিহতরা হচ্ছে; এনামুল হাসান (৪), মিনারা বেগম (৫), জহুরা বেগম (৬০) এবং সাত মাস বয়সী মাকসুদ ও তিন মাস বয়সী জোহরা। বাকি দুজনের নাম পাওয়া যায়নি। তাদের বাড়ি রাখাইন রাজ্যের টাউনশিপের বুচিডং (বুথেডং) ইয়্যাংচং গ্রামে।
জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল আমিন চৌধুরী বেনারকে বলেন, “৩০-৪০ জনের মতো রোহিঙ্গা নিয়ে একটি নৌকা মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আসার সময় বাইল্যাখালী পয়েন্টে সাগরের ঢেউয়ের ধাক্কায় উল্টে যায়।”
“দুর্ঘটনাটি দিনের বেলায় ঘটায় স্থানীয় জেলেরা এক শিশুকে মৃত ও ৩২ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে সক্ষম হন। মুমূর্ষু অবস্থায় তিনজনকে বাহারছড়ার একটি ক্লিনিকে চিকিৎসা দিতে পাঠানো হয়,” বলেন তিনি।
তবে হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই তিনজনকেই মৃত ঘোষণা করেন বলে জানান বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক কাঞ্চন কান্তি দাশ। নিহতদের দুজন শিশু ও একজন নারী।
টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর স্বাস্থ্য ক্লিনিক ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. আমান উল্লাহ বেনারকে বলেন, “স্থানীয় লোকজন নৌকা ডুবির ঘটনায় ৯ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। এর মধ্যে ৩ জনের মৃত্যু হয়, তবে বাকিদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।”
উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গা আশরাফ আলী বেনারকে জানান, “মিয়ানমার সেনাদের তাড়া খেয়ে গত সোমবার রাতে রাখাইনের ডংখালী থেকে ৩৫ জনের একটি দল নৌকা করে বাংলাদেশে পাড়ি দেয়। রাত সাড়ে ১০ টার দিকে টেকনাফের মহেশখালী ঘাট এলাকায় পৌঁছালে সাগরে ঢেউয়ের আঘাতে নৌকাটি উল্টে যায়। এতে তাৎক্ষণিকভাবে নারী, শিশুসহ ২৫ জন উদ্ধার হলেও বাকিদের কোনো খোঁজ মেলেনি।”
আশরাফ জানান, নৌকা না পেয়ে ডংখালীর চরে তারা ২০ দিন ধরে অপেক্ষা করছিলেন। সেখানে আরও ১০ হাজারের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষা করছে।
এর আগে গত ২৮ সেপ্টেম্বর উখিয়ার ইনানি সৈকতের কাছে নৌকাডুবির ঘটনায় ২১ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছিল বলে জানান উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।
এদিকে রোহিঙ্গাদের নৌকা পারাপার করে এমন চার শতাধিকের বেশি দালাল ও মাঝিমাল্লাকে গ্রেপ্তার করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
“বাকি দালালদের গ্রেপ্তারেও অভিযান অব্যাহত রয়েছে,” বলেন ওসি মাইন উদ্দিন।
সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শাহাজান মিয়া রোহিঙ্গাদের বরাত দিয়ে বেনারকে জানান, “রাখাইনে এখনও মিয়ানমারের সেনারা নির্যাতন চালাচ্ছে। তাই প্রাণে বাঁচতে রোহিঙ্গারা ঝুঁকি নিয়েও বাংলাদেশে প্রবেশ অব্যাহত রেখেছে।”
আগের মতো সাগর দিয়ে অনুপ্রবেশ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “সোমবারেই ৫ শ’র বেশি রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করেছে।”