রাখাইন থেকে পালানোর সময় মিয়ানমার নৌবাহিনীর হাতে দুই শতাধিক রোহিঙ্গা গ্রেপ্তার
2023.11.03

নৌকায় করে সমুদ্রপথে মিয়ানমার থেকে পালানোর সময় ২২৬ জন রোহিঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে দেশটির নৌবাহিনী।
ওই রোহিঙ্গারা গত ২৭ অক্টোবর থেকে বিভিন্ন দলে মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে যাবার চেষ্টা করছিলেন বলে বেনারনিউজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিও ফ্রি এশিয়াকে (আরএফএ) জানিয়েছেন পশ্চিম মিয়ানমারের স্থানীয়রা।
মিয়ানমার নৌবাহিনী আইয়ারওয়াদি অঞ্চলের উপকূল থেকে ১৬৭ জন রোহিঙ্গা বহনকারী দুটি নৌকা আটক করেছে বলে শুক্রবার আরএফএকে জানিয়েছে মিয়ানমার পুলিশের একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র।
“তারা থাইল্যান্ডে যাওয়ার সময় সমুদ্রে ধরা পড়ে। নৌকায় ৮০ জন পুরুষ এবং ৮৭ জন নারী ছিলেন,” নিরাপত্তাজনিত কারণে নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরএফএকে বলেন তিনি।
মিয়ানমারের নাগরিক, দুই নৌকার দশ চালকের বিরুদ্ধেও মামলা করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে মিয়ানমারের কিছু সেনাপন্থী চ্যানেল জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃতরা সবাই রাখাইন রাজ্যের অধিবাসী। তারা দুটি নৌকায় করে আইয়ারওয়াদি অঞ্চলের হাইংগিকিউন থেকে উত্তর-পশ্চিমে যাত্রার সময় মিয়ানমার নৌবাহিনী টহল জাহাজ নৌকাগুলো আটক করে।
নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা আটক রোহিঙ্গাদের হাইংগিকিউন থানা থেকে একটি অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন জান্তা কাউন্সিল প্রশাসনের সাথে ঘনিষ্ঠ স্থানীয় এক ব্যক্তি। ওই রোহিঙ্গাদের আর কোনো সংবাদ জানা যায়নি বলেও জানান তিনি।
একইভাবে সোমবার বাংলাদেশের শরণার্থী শিবির থেকে রোহিঙ্গাদের একটি দল রাখাইন রাজ্যে প্রবেশের পর নয়জন পুরুষ ও ১২ জন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারা মালয়েশিয়া যাবার পথে রাখাইনের রাথেডাং শহরের ডন পাইক গ্রামের নিকটবর্তী সাগরে আটক হন।
এছাড়া, ২৭ অক্টোবর ৩৮ জন রোহিঙ্গা বহনকারী মালয়েশিয়াগামী একটি নৌকা রাখাইনের রাথেডাং শহরের আহ এনগু মাও গ্রামের কাছে আটক করেন মিয়ানমার কর্মকর্তারা।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা-নিয়ন্ত্রিত রাখাইন ডেইলি টেলিগ্রাম পেজের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দলটিকে বিচারের আওতায় আনার জন্য পরের দিন সিটওয়ে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।
তিনটি মামলায় নৌকার মালিক, নাবিক ও দালালসহ আরও ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
সিটওয়ের এক রোহিঙ্গা শরণার্থী আরএফএকে জানিয়েছেন, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের জন্য বেঁচে থাকা কঠিন বলে তাঁরা নিয়মিত নৌকায় করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে যাবার চেষ্টা করেন।
“এভাবে চলে যাওয়াই স্বাভাবিক এবং এটি বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। মানুষ দলে দলে যাচ্ছে, যদিও তারা জানে পথটি মারাত্মক,” নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “যারা পালিয়েছিল তাদের প্রায় অর্ধেক এসেছে। কিন্তু এটি বন্ধ করার কোনো উপায় নেই। কারণ এখানে বসবাস করা কঠিন–চাকরির অভাব এবং বেকারত্ব, স্বাধীনতা নেই। আর মানুষ চলে যাচ্ছে কারণ ক্ষোভ দিন দিন বাড়ছে।”
রোহিঙ্গারা দালালদের জনপ্রতি ১ কোটি কিয়াট (৪৭৬২ ইউএস ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় পাঁচ লাখ ২৭ হাজার টাকার সমপরিমাণ) দিয়ে বিদেশে যাবার চেষ্টা করছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা প্রায়ই নৌকায় করে যাওয়ার সময় মিয়ানমার নৌবাহিনীর হাতে আটক হয়।
গ্রেপ্তারকৃত রোহিঙ্গাদের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য আরএফএ আইয়ারওয়াদি অঞ্চলের সামরিক জান্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র মং মং থানের সাথে যোগাযোগ করেছিল। কিন্তু প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত উত্তর পাওয়া যায়নি।
প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে রেডিও ফ্রি এশিয়া, বার্মিজ সার্ভিস।