ভাসানচরে রোহিঙ্গা স্থানান্তর অনিশ্চিত: প্রতিমন্ত্রী
2019.11.06
ঢাকা

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরগুলোতে কর্মরত জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সম্মতি না পাওয়ায় এক লাখ শরণার্থীকে নভেম্বরের মধ্যে নোয়াখালীর ভাসানচরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে বলে বুধবার বেনারকে জানিয়েছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
এদিকে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এক ইমেইল বার্তায় বেনারকে জানায়, স্থানান্তরের আগে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে তাঁদের সুরক্ষাসহ বিভিন্ন বিষয়ে একটি স্বাধীন কারিগরি মূল্যায়ন প্রয়োজন।
বুধবার প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান বেনারকে বলেন, “নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। ভাসানচর প্রস্তুত। কিন্তু আপাতত এই স্থানান্তর অনিশ্চিত।”
“ভালোভাবে বসবাস ও ভবিষ্যতের আশায় অনেক রোহিঙ্গা পরিবার ভাসানচরে যেতে রাজি হয়েছে,” মন্তব্য করে এনামুর রহমান বলেন, “আমরা ভাসানচরে স্থানান্তরের ব্যাপারে জাতিসংঘের সংস্থাদের সাথে একাধিক বৈঠক করেছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাদের কাছ থেকে সম্মতি পাওয়া যায়নি।”
“তারা সম্মতি না দিলে আমরা স্থানান্তর শুরু করতে পারি না,” যোগ করেন তিনি।
জাতিসংঘের সংস্থার সম্মতি ছাড়া রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানান্তর অসম্ভব কি না এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয়, বাসস্থান, স্বাস্থ্যসেবা, নিরাপত্তা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সহয়তা দিতে পারব। কিন্তু জাতিসংঘের সংস্থাগুলো তাদের খাদ্য সরবরাহ করে। সুতরাং, জাতিসংঘের সংস্থার দরকার।”
এনামুর রহমান বলেন, স্থানান্তর প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তিনিসহ জাতিসংঘের প্রতিনিধিদের ভাসানচর সফরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেই সফর স্থগিত করা হয়েছে।
তবে ওই সফর স্থগিতের কোনো কারণ ব্যাখ্যা করেননি প্রতিমন্ত্রী।
সরকারের পরিকল্পনার ব্যাপারে জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার কাছে বেনারের পক্ষে মন্তব্য জানতে চাওয়া হলে সংস্থার যোগাযোগ কর্মকর্তা লুইস ডনোভান বেনারকে বলেন, ভাসানচরে যেতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের তালিকা করছে সরকার এমন তথ্যের ভিত্তিতে তাঁরা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সাথে সভা করেছেন।
ইউএনএইচসিআর সরকারের সাথে পুনরায় এ সংক্রান্ত সভা করবে জানিয়ে ডনোভান জানান, “জাতিসংঘের অবস্থান হলো, ভাসানচরে স্থানান্তর স্বেচ্ছায় হতে হবে। এবং সরকারের পক্ষ থেকেও সে বিষয়ে নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে।”
ডনোভান বলেন, “এব্যাপারে সরকার ও শরণার্থীদের মধ্যে সংলাপ জরুরি এবং জাতিসংঘ প্রয়োজনে পরামর্শ ও সহয়তা দেবে।”
তিনি বলেন, “স্থানান্তর শুরুর আগে ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও দ্বীপের স্থায়িত্ব সম্পর্কে নিশ্চিত হতে একটি স্বাধীন ও বিশদ কারিগরী মূল্যায়ন প্রয়োজন। এই মূল্যায়ন প্রতিবেদনে সাইক্লোন ও অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি এবং সেখানকার পানিসম্পদের তথ্য থাকতে হবে।”
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, জীবিকার সুবিধা ও নিরাপত্তা দিতে হবে। পাশাপাশি চর ও মূল ভূখণ্ডের ভেতর চলাচলের স্বাধীনতা থাকতে হবে বলেও জানান ডনোভান।
ভাসানচর প্রস্তুত
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমানের সভাপতিত্বে গত ১৬ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় অক্টোবরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে স্থানাস্তর কার্যক্রম শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আবাসনের লক্ষ্যে ভাসানচরে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে জানিয়ে সভা থেকে স্থানান্তরের প্রস্ততি হিসাবে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ বসবাসের জন্য প্রয়োজনীয় সকল সুবিধা নিশ্চিত করতে সরকারের সকল সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে নির্দেশ দেয়া হয়।
তবে সরকার কোনো রোহিঙ্গাকে সেখানে জোর করে পাঠাবে না বলেও সভায় জানান প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
ভাসানচর প্রকল্প পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বৈঠকে জানান, রোহিঙ্গাদের জন্য ভাসানচরে ১৪৪০টি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সাইক্লোন আশ্রয় কেন্দ্রের অবশিষ্ট কাজ অক্টোবরের মাঝামাঝি শেষ হবে।
তিনি বলেন, বাঁধের ১২ কিলোমিটার, কূল রক্ষার ২.১ কিলোমিটার কাজসহ আভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য ৪০ কিলোমিটার রাস্তার কাজের শতকরা ৯০ ভাগ সম্পন্ন হয়েছে।
আব্দুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী বলেন, স্বাভাবিক মৌসুমে প্রকল্পের উচ্চ গতির স্পিড বোটের মাধ্যমে মূল ভূখণ্ড থেকে দুই থেকে আড়াই ঘন্টার মধ্যে ভাসানচর পৌঁছান সম্ভব।