বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের ওপর গুলির ঘটনা অবগত নয় বিজিবি

বেনার নিউজ স্টাফ
2017.11.07
ওয়াশিংটন ডিসি
রাখাইন রাজ্যের মংডুতে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে দাঁড়িয়ে আছে একটি শিশু। রাখাইন রাজ্যের মংডুতে মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে দাঁড়িয়ে আছে একটি শিশু। ১০ অক্টোবর ২০১৭।
AFP

বাংলাদেশ সীমান্তের ভেতর থেকে অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা মংডুতে মিয়ানমারের চার সীমান্তরক্ষীর ওপর গুলি ছুড়েছে, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের এমন অভিযোগের বিষয়ে অবগত নন বলে মঙ্গলবার বেনারকে জানিয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর একজন কর্মকর্তা।

বেনারনিউজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিও ফ্রি এশিয়া (আরএফএ) এক প্রতিবেদনে জানায়, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বেষ্টনির ৩০০ ফুট ভেতরের পাহাড় থেকে একদল সশস্ত্র লোক মিয়ানমার সীমান্তরক্ষীদের উদ্দেশ্যে রোববার অন্তত ৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে।

অনলাইন সংবাদপত্র ইরাবতির বরাত দিয়ে ওই প্রতিবেদন বলা হয়, সীমান্তের এপার থেকে গুলির জবাবে মিয়ানমার সীমান্ত বাহিনীও পাল্টা গুলি ছোড়ে। অতিরিক্ত পুলিশ ডাকার জন্য একজন কর্মকর্তা মোটর সাইকেলে নিকটবর্তী অং থাবিয়া পুলিশ স্টেশনে যান।

পরে ২০ জনের বেশি পুলিশের একটি দল এসে বাকি তিনজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

“এরকম কিছু ঘটলে নিয়ম অনুযায়ী মিয়ানমারের দিক থেকে আমাদের জানানোর কথা। কিন্তু আমরা ওদের কাছ থেকে এমন কোনো তথ্য পাইনি। সুতরাং এক্ষেত্রে তদন্ত করার কোনো প্রশ্নই আসে না,” বেনারকে বলেন বিজিবির সেক্টর কমান্ডার কর্নেল এমএম আনিসুর রহমান।

এদিকে সীমান্তে গোলাগুলির বিষয়ে র‍্যাবের কাছেও কোনো তথ্য নেই বলে বেনারকে জানান কক্সবাজারের র‍্যাব এর কমান্ডার মেজর রুহুল আমিন।

তবে আরএফএ’র প্রতিবেদন মতে, এই ঘটনায় বিজিবির কাছে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন মিয়ানমারের কর্মকর্তারা।

“বাংলাদেশের দিক থেকে একটি সশস্ত্র গোষ্ঠী গুলি ছোড়ে, অবশ্য কেউ হতাহত হয়নি,” বলেন রাখাইন রাজ্যের একজন পুলিশ কর্মকর্তা অং মিয়াত মো।

তিনি বলেন, “তারা কোন দলের সদস্য তা বলতে পারব না। তবে আমরা শুনেছি যে বাংলাদেশে নিরাপত্তারক্ষীরা তিন সশস্ত্র ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।”

অগাস্টের শেষ দিকে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর ত্রিশটির মতো চৌকিতে রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের একযোগে হামলার প্রেক্ষিতে দেশটির সেনাবাহিনী ও স্থানীয় বৌদ্ধরা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ব্যাপক নিপীড়নমূলক অভিযানে নামে। এর ফলে এখন পর্যন্ত ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন।

মংডু ও আশপাশের রথিডং ও বুথিডং এলাকা তিনটি সাম্প্রতিক সময়ের সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত অঞ্চলগুলোর অন্যতম।

এদিকে রাখাইন রাজ্য সরকারের মুখপাত্র মিন অং সাম্প্রতিক গোলাগুলির ঘটনায় সম্পৃক্তরা ২৫ আগস্টের ঘটনার সাথে সংযুক্ত বলে মনে করেন।

“আমার ধারণা তারা পরস্পর সম্পর্কিত,” বলেন তিনি।

রাখাইন রাজ্যের সহিংসতা ‘জাতিগত নিধন’: সিপিএ

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অপারেশনকে ‘জাতিগত নিধন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ৬৩তম কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশন (সিপিএ) সাধারণ পরিষদ মঙ্গলবার একটি ‍বিবৃতি গ্রহণ করেছে।

পয়লা নভেম্বর ঢাকায় শুরু হওয়া সাত দিনব্যাপী সিপিএ অধিবেশনে কমনওয়েলথভুক্ত ৪৪টি দেশের পাঁচ’শর বেশি সংসদ-সদস্য, স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার অংশ নেন।

বিবৃতিতে কমনওয়েলথ সদস্য রাষ্ট্রসমুহ অবিলম্বে, নিঃশর্তে ও অনির্দিষ্টকালের জন্য রাখাইন রাজ্যে ‘সহিংসতা ও জাতিগত নিধন’ বন্ধ করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানায়।

এতে কফি আনানের নেতৃত্বে গঠিত উপদেষ্টা কমিশনের সুপারিশ অবিলম্বে, নিঃশর্তে ও পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি দ্রুততম সময়ের মধ্যে বল-প্রয়োগের ফলে বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশে পালিয়ে আসা বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করার জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানায় সিপিএ সদস্য রাষ্ট্রগুলো।

প্রায় দশ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার জন্য সীমান্ত খুলে দেওয়া ও তাদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ধন্যবাদ জানায় কমনওয়েলথ রাষ্ট্রগুলো।

রোহিঙ্গা সম্পর্কে গৃহীত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সিপিএ সাধারণ অধিবেশনের চেয়ারপারসন ‍ও বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী বেনারকে বলেন, “এই বিবৃতির ফলে জাতিসংঘের থার্ড কমিটিতে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনার সময় কমনওয়েলথভুক্ত রাষ্ট্রগুলো বাংলাদেশকে সমর্থন করবে বলে আমরা আশা রাখি।”

প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন ঢাকা থেকে কামরান রেজা চৌধুরী ও কক্সবাজার থেকে তুষার তুহিন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।