বাংলাদেশের প্রত্যাশা, রোহিঙ্গা সংকটে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে নতুন মার্কিন সরকার

কামরান রেজা চৌধুরী
2020.11.10
ঢাকা
201110_US_Election_Reaction_1000.jpg কক্সবাজারের টেকনাফে লেদা শরণার্থী শিবিরের একটি রাস্তায় চলাফেরা করছেন রোহিঙ্গারা। ২৮ অক্টোবর ২০২০।
[আবদুর রহমান/বেনারনিউজ]

নব নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন সরকার রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছে বাংলাদেশ।

“সংখ্যালঘু এই মুসলিম জনগোষ্ঠীকে ফেরত নিতে মিয়ানমারের ওপর নতুন সরকার চাপ প্রয়োগ করবে বলে মনে হয়,” বেনারকে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ফারুক খান।

তাঁর মতে, ডেমোক্রেট সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে খুব সোচ্চার। সে কারণে মানবিক দিক বিবেচনা করে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জোর দেবে নতুন মার্কিন সরকার।

তবে অনেকের মতে, বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ উত্থাপিত হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হবে সরকারকে। ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে মানবাধিকার প্রশ্নে তেমন কঠিন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়নি আওয়ামী লীগ সরকারকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের “খুবই সুসম্পর্ক রয়েছে” জানিয়ে ফারুক খান বলেন “আমার মনে হয়, জো বাইডেনের নতুন সরকার বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কে তেমন কোনো মৌলিক পরিবর্তন আনবে না।”

“যেহেতু ডেমোক্রেটরা মানবাধিকার, আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের ওপর জোর দেয়, সেহেতু বাংলাদেশের যেসব রোহিঙ্গা রয়েছে তাদের প্রত্যাবাসনে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের আরও সহায়তা করবে,” বলেন ফারুক খান।

তিনি বলেন, “মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরিয়ে নিতে তারা মিয়ানমারকে রাজি করাতে প্রভাবিত করবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।”

ফারুক খানের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের নীতির ব্যাপারে ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হবে বলে মনে হয় না।

“যুক্তরাষ্ট্রে চীন এখন বড় ইস্যু,” জানিয়ে তিনি বলেন, “তবে চীন ও দক্ষিণ-চীন সাগরের ব্যাপারে বাইডেন সরকার কী পদক্ষেপ নেয় সেটি বলার সময় এখনও আসেনি।”

“আমার মনে হয়, নতুন সরকার রাতারাতি চীনের ব্যাপারে মার্কিন নীতি পরিবর্তন করবে না। তবে, চীনের ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসনের চেয়ে বাইডেন প্রশাসন কিছুটা নমনীয় হতে পারে,” বলেন ফারুক খান।

এদিকে আসন্ন সরকারের আমলে “বাংলাদেশের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মৌলিক নীতির কোনো পরিবর্তন ঘটবে না,” বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইন্সটিটিউটের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হুমায়ূন কবির।

তিনি বেনারকে বলেন, “রোহিঙ্গা ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসন সব সময় বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে আসছে। তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য অর্থ সহায়তা প্রদান করছে। যেহেতু ডেমোক্রেটরা মানবিক বিষয়গুলো প্রাধান্য দেয়, সেহেতু বাইডেন প্রশাসনও রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে সমর্থন করবে।”

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে শুরু করে কয়েক মাসের মধ্যে প্রায় সাড়ে সাত লাখ মুসলিম রোহিঙ্গাকে জোর করে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে ঠেলে দেওয়া হয়। এরপর থেকে ওই সংকট সমাধানে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে ও মিয়ানমারে অবস্থানকারী রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা বাবদ একশ কোটির বেশি (১.২ বিলিয়ন) ডলার অনুদান দিয়েছে দেশটি। এর মধ্যে শুধু ২০২০ সালে দিয়েছে ৪৩ কোটি ডলারের বেশি।

“আমেরিকা বরবরই আমাদের পাশে ছিল। রোহিঙ্গাদের সহায়তা করে গেছে,” জানিয়ে বান্দরবানের ঘুমধুম কোনারপাড়া শূন্যরেখায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের নেতা দীল মোহাম্মদ বেনারকে বলেন, “নতুন সরকারের কাছেও আমাদের প্রত্যাশা থাকবে, তাঁরা যেন রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ায়।”

“আমরা আশা করব যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকার আমাদের পাশে থাকবে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে তারা জোরালো ভূমিকা পালন করবে,” বেনারকে বলেন কক্সবাজার উখিয়ার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের নেতা মো. নুর।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সরকারের রোহিঙ্গাদের সহায়তা অব্যাহত রাখার বিষয়ে সবাই আশাবাদী হলেও রাষ্ট্রদূত হুমায়ূন কবিরের মতে, “দেশের অভ্যন্তরে মানবাধিকার লঙ্ঘন, আইনের শাসন ও গণতন্ত্রের ব্যাপারে তাদের কাছ থেকে প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ।”

তবে সন্ত্রাস মোকাবেলা, ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রতিরক্ষাসহ অন্যান্য বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের সহযোগিতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

কক্সবাজার থেকে প্রতিবেদনটি তৈরিতে সহয়তা করেছেন সুনীল বড়ুয়া।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।