মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ ঢাকায়

জেসমিন পাপড়ি ও আবদুর রহমান
2021.12.13
ঢাকা ও কক্সবাজার
মিয়ানমার বিষয়ক জাতিসংঘের বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ ঢাকায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজে করে চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালীর ভাসানচর যাচ্ছেন এক দল রোহিঙ্গা। ২৯ ডিসেম্বর ২০২০।
[রয়টার্স]

রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সরেজমিন অবগত হতে সোমবার বাংলাদেশ সফরে এসেছেন জাতিসংঘের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ।

এক সপ্তাহের সফরে তিনি বাংলাদেশে শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠক ছাড়াও কক্সবাজার ও ভাসানচরে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করবেন বলে জানানো হয়েছে জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।

জাতিসংঘে মিয়ানমারের মানবাধিকার বিষয়ক বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব নেবার পর বাংলাদেশ সফরের মধ্য দিয়ে টম অ্যান্ড্রুজ তাঁর মিশন শুরু করেছেন বলে ওই বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

সোমবার তাঁর ঢাকা পৌঁছার সংবাদ নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বেনারকে জানান, তিনি ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। বাংলাদেশে তাঁর সফরের ওপর ভিত্তি করে ২০২২ সালের মার্চে অনুষ্ঠিতব্য জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন টম অ্যান্ড্রুজ।

সফরকালে ঢাকায় বিভিন্ন বৈঠকে অংশগ্রহণ ছাড়াও কক্সবাজার এবং ভাসানচরে গিয়ে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবেন বিশেষ দূত।

“মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতি বিষয়ে বিশেষ দূত টম অ্যান্ড্রুজ ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন। তবে তিনি কবে এবং কোন ক্যাম্প ঘুরে দেখবেন সেটি এখন বলা যাচ্ছে না,” সোমবার বেনারকে জানান কক্সবাজারের অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) সামছু দ্দৌজা।

সোমবার এক বিবৃতিতে টম অ্যান্ড্রুজ বলেন, “বিশ্বের ভুলে গেলে চলবে না যে, প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গণহত্যার মুখে জীবন নিয়ে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন। যখন পরিস্থিতি নিরাপদ, সম্মানজনক ও টেকসই হবে তখন রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবেন, এর বাইরে তাঁরা বেশি কিছু চান না।”

“যখন মিয়ানমারের জান্তা পদ্ধতিগতভাবে দেশটির মানুষের মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলেছে, তখন মিয়ানমার থেকে বাড়িঘর ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে যেতে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ। আমি এসব রোহিঙ্গাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেয়ে সম্মানিত,” বলেন অ্যান্ড্রুজ।

বাংলাদেশ সফরের সুযোগ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান টম অ্যান্ড্রুজ।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পরিদর্শনকালে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারে প্রতিনিধি, জাতিসংঘের কর্মকর্তা ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন এই দূত। বাংলাদেশ ছাড়ার আগে ১৯ ডিসেম্বর দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করবেন তিনি।

এর আগে ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত জাতিসংঘে মিয়ানমারের বিশেষ দূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন ইয়াংহি লি। বারবার অনুমতি চাইলেও মিয়ানমারে প্রবেশ করতে পারেননি তিনি, মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে বৈঠকও করতে পারেননি। তবে তিনি কয়েক দফা বাংলাদেশ সফর করে রোহিঙ্গাদের সাথে সাক্ষাত করেন।

বিশেষ দূতের সফর রোহিঙ্গাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ

“আমরা আশা করছি তিনি ক্যাম্প ঘুরে যাওয়ার পর রোহিঙ্গাদের গণহত্যার বিচার এবং অধিকার নিয়ে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি বিশ্বের কাছে তুলে ধরবেন এবং আন্তর্জাতিকভাবে মিয়ানমার উপর চাপ সৃষ্টি অব্যাহত রাখবেন,” টম অ্যান্ড্রুজের আসন্ন শরণার্থী শিবির সফর সম্পর্কে সোমবার বেনারকে বলেন টেকনাফের নতুন লেদা অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে নেতা মোস্তফা কামাল।

“বিশেষ দূতের ক্যাম্পে আসার বিষয়টি রোহিঙ্গাদের জন্য খুবই গুরুত্ব বহন করে,” উল্লেখ করে কক্সবাজারের শিবিরে রোহিঙ্গা ইয়ুথ এসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা কিন মং (মো. রফিক) বেনারকে বলেন, “তিনি মানবাধিকার নিয়ে কাজ করছেন এবং কীভাবে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ করা হয়েছে তা সরেজমিন জেনে আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরতে পারবেন।”

“আমরা আশা করছি নতুন করে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা শুরু হবে। এতে করে প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার একটি পথ বের হবে। তা ছাড়া বিশেষ দূতের কাছে রোহিঙ্গারা তাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অত্যাচার ও দুঃখকষ্টের কথা তুলে ধরতে পারবেন,” বলেন রোহিঙ্গা নেতা কিন মং।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।