বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় সশস্ত্র দুই রোহিঙ্গা দলের আধিপত্যের লড়াই

নাজমুল আহসান
2023.02.02
অকল্যান্ড, ক্যালিফোর্নিয়া
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় সশস্ত্র দুই রোহিঙ্গা দলের আধিপত্যের লড়াই বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় রোহিঙ্গাদের দুটি সশস্ত্র দলের সংঘর্ষের পর ঘরবাড়ি হারিয়ে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়িতে আশ্রয় নেয়া একটি রোহিঙ্গা পরিবার। ১৮ জানুয়ারি ২০২৩।
[আবদুর রহমান/বেনারনিউজ]

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় সম্প্রতি রোহিঙ্গাদের দুটি সশস্ত্র সংগঠনের সংঘর্ষ আবারো আলোচনার সামনে নিয়ে এসেছে দীর্ঘদিন থেকে নিষ্ক্রিয় রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনকে।

গত ১৮ জানুয়ারি রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) এবং আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) মধ্যকার সংঘর্ষে অন্তত একজন নিহত হন, পুড়ে যায় শিবিরের বেশিরভাগ বসতবাড়ি।

ঘটনার পর চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে শূন্যরেখায় বসবাসকারী প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গার অনেকেই বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছেন।

আরএসও এবং আরসা উভয়েই দাবি করে তারা রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে তৎপর। জানামতে এই দুই সংগঠনের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা এই প্রথম।

ওই সংঘর্ষে নিহত হন হামিদ উল্লাহ নামে এক রোহিঙ্গা। বেনারনিউজের হাতে পৌঁছানো তাঁর লাশের ছবি ও এক প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ মতে হামিদ উল্লাহ আরএসওর সদস্য হতে পারেন, কারণ তাঁর পরনে ছিল সংগঠনটির ইউনিফর্ম।

১৯৮২ সালে যাত্রা শুরু করে আরএসও ২০১০ সাল পর্যন্ত মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে সবচেয়ে প্রভাবশালী রোহিঙ্গা জঙ্গি সংগঠন হিসেবে আধিপত্য বজায় রাখে। অন্যদিকে মিয়ানমারে ২০১৬ সালে সীমান্ত চৌকিতে একের পর হামলা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে আরসা।

আরসাকে রোহিঙ্গাদের অনেকেই সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে গণ্য করেন। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর আরএসও আবার সক্রিয় ওঠে, রোহিঙ্গাদের ওপর প্রভাব বিস্তারে আরসার সাথে এর প্রতিযোগিতার ধারাবাহিকতায় সংগঠিত হয় ১৮ জানুয়ারির সংঘর্ষ।

“নানা ধরনের অপরাধ কার্যক্রম চালানো সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে প্রতিরোধ না করে আমরা নীরব দর্শক হয়ে বসে থাকতে পারি না,” সীমান্তের শূন্যরেখা থেকে বেনারনিউজের কাছে পাঠানো এক বার্তায় জানায় আরএসও।

তবে বেনারের পক্ষ থেকে চেষ্টা করেও এ বিষয়ে আরসার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

rohingya 2.jpg
বান্দরবান জেলার তুমব্রু এলাকায় বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখায় অবস্থিত রোহিঙ্গা শিবিরে আগুনের ধোঁয়া দেখা যাচ্ছে। ছবিটি নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে ধারণ করা ভিডিও থেকে নেয়া। ১৮ জানুয়ারি ২০২৩।

খুবই প্রশিক্ষিত’

২০১৬ সালে মিয়ানমারের সীমান্ত চৌকিতে আরসার হামলাকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করে রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা এলাকায় ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নমূলক অভিযানে প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেন।

রোহিঙ্গা নিধনের ওই অভিযানকে জাতিসংঘ ‘জাতিগত নিধনের একটি পাঠ্যপুস্তক উদাহরণ’ হিসাবে বর্ণনা করেছে, এবং ওই ঘটনাকে ‘গণহত্যা’ বলে স্বীকৃতি দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের পর ২০২১ সালের মার্চের দিকে আরএসও বাংলাদেশ সক্রিয় হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তার দাবি আরএসও’র হঠাৎ পুনরুত্থান চোখে পড়লেও এই বাহিনীটি পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকায় অনেকদিন ধরেই সক্রিয় ছিল। ২০১৭ সালে অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীই পার্বত্য চট্টগ্রামে আশ্রয় নেন।

“আরএসও আরসার মতো নয়। আরএসওর সদস্যরা খুবই প্রশিক্ষিত,” গণমাধ্যমে মন্তব্য করার অনুমতি নেই বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বেনারকে বলেন ওই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে আলাদা করা শূন্যরেখা জিরো পয়েন্ট নামেও পরিচিত। এই এলাকা দুই দেশেরই আওতার বাইরে থাকায় রোহিঙ্গা জঙ্গি বা অপরাধীরা এটিকে নিজেদের অভয়ারণ্য হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্রিস্টিনা ফিঙ্ক বেনারনিউজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিও ফ্রি এশিয়ার (আরএফএ) বার্মিজ সার্ভিসকে বলেন, “এই দুটি রোহিঙ্গা সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে লড়াইয়ের মূল কারণ আধিপত্য বিস্তার। তারা রোহিঙ্গা শিবিরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে মরিয়া। এই শরণার্থী শিবিরের অবস্থানই এর মূল কারণ।”

“এখানে নিজেদের আধিপত্য নিশ্চিত করা গেলে গ্রুপগুলো আরও সহজে মিয়ানমারে প্রবেশ করতে পারে এবং অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত বাণিজ্যে চাঁদা বসিয়ে অর্থ উপার্জন করতে পারে,” বলেন তিনি।

গত বছরের নভেম্বরে শূন্যরেখার রোহিঙ্গা শিবির এলাকায় বাংলাদেশি নিরাপত্তা বাহিনী এবং আরসার মধ্যে একটি সহিংস অবস্থা শুরু হবার পর এই অবস্থাটি প্রকাশ্যে আসে।

সেই সময়ে, র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব) “মাদক চোরাচালানকারীদের” বিরুদ্ধে একটি অভিযান চালাতে গেলে আরসার সাথে সংঘর্ষে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) একজন কর্মকর্তা নিহত হন।

প্রথম দিকে বাংলাদেশ এই ঘটনার সাথে জড়িত হিসেবে “মাদক চোরাচালানকারীদের” দায়ী করলেও পরে পুলিশ এই ঘটনায় যে মামলা দায়ের করে তাতে আরসা প্রধান আতাউল্লাহ আবু আম্মার জুনুনিসহ অন্যান্যদের আসামি করে।

ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া র‍্যাব কমান্ডারকেও প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। এই প্রত্যাহারের নেপথ্য কারণ হিসেবে মনে করা হয়, শূন্যরেখায় অভিযান চালিয়ে আন্তর্জাতিক নিয়মের লঙ্ঘন।

যুক্তরাজ্য-ভিত্তিক সাংবাদিক শফিউর রহমান রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের বিষয়টি দীর্ঘদিন থেকে পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি মনে করেন, সাম্প্রতিক আরএসও-আরসা সংঘর্ষের সাথে নভেম্বরের অভিযানের সম্পর্ক রয়েছে।

সাম্প্রতিক একটি ব্লগ পোস্টে তিনি লিখেছেন, “বাংলাদেশ আবারও একই রকম পরিস্থিতিতে জড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি নিতে পারে না। অতএব, ১৮ জানুয়ারি শূন্যরেখায় যে ঘটনা ঘটেছে, সেখানকার বাসিন্দাদের অনেকেই মনে করেন ওই ঘটনায় বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতিতেই হয়েছে।”

এক হোয়াটস অ্যাপ বার্তায় আরএসওর মুখপাত্র কো কো লিন বেনারকে জানান, “অসহায় একটি গোষ্ঠীকে দীর্ঘকালীন আশ্রয় দেবার জন্য আমরা বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ।”

“সরকার, রাজনীতিবিদ ও জনগণ আমাদের সম্প্রদায়ের মঙ্গল কামনা করেন। সম্পূর্ণ সহানুভূতির সাথে সরকার আমাদেরকে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে,” বলেন কো কো লিন।

বাংলাদেশ সরকার আরএসওকে সহায়তা করছে কি না এ বিষয়ে জানতে পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে বেনারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

rohingya 3.jpg
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের শূন্যরেখার রোহিঙ্গা শিবিরে সংঘর্ষের পর সেখানে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের একটি দল আশ্রয়ের আশায় বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির একটি গ্রামে প্রবেশ করছে। ১৮ জানুয়ারি ২০২৩। [আবদুর রহমান/বেনারনিউজ]

যে কারণে সক্রিয় আরএসও

এরএসওকে আশ্রয় বা প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এটিই প্রথম নয়। ৮০ ও ৯০ এর দশক জুড়ে, আরএসও বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় তৎপর ছিল।

স্বাধীন পর্যবেক্ষকরা মনে করেন, আরএসও’র ক্ষমতায়িত হবার পেছনে বাংলাদেশ সরকারের ধারাবাহিক সমর্থন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

১৯৯১ সালে সুইডিশ সাংবাদিক বার্টিল লিন্টনার যিনি মিয়ানমারের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে ব্যাপকভাবে কভার করেছিলেন, তাঁর প্রতিবেদনে এসেছে যে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আরএসও ক্যাম্পগুলোতে ভারী কামানের উপস্থিতি রয়েছে।

১৯৯৮ সালে আরএসও আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন নামে একটি জোটবদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে অঙ্গীভূত হয়ে যায়।

অনেকেই ধারণা করেন, অন্যান্য দেশের রাজনৈতিক ও জঙ্গি সংগঠনের সাথে সম্পর্ক স্থাপনের মতোই বাংলাদেশের ডানপন্থী রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে একটি শক্তিশালী সম্পর্ক তৈরি করেছে আরএসও।

আবার অনেকের মতে, আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন তালেবান ও আল কায়েদার সাথেও আরএসওর কিছু সদস্যের যোগাযোগ রয়েছে।

বার্টিল লিন্টনারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কক্সবাজারে জামায়াত সংশ্লিষ্ট একটি দাতব্য সংস্থার অফিস ছিল আরএসওর সামরিক সদর দপ্তর। এখানে জামায়াতের ছাত্র সংগঠনের কর্মীরাও প্রশিক্ষণ নিয়েছিল।

বাংলাদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকেও এমন ধারণা পাওয়া যায় যে, সাংস্কৃতিক মিলের কারণে আরএসও সদস্যরা সহজেই কক্সবাজারের স্থানীয় সম্প্রদায়ের সাথে মিশে গিয়েছিল এবং জামায়াত তাদেরকে একটি শক্তিশালী ভিত্তি তৈরিতে সাহায্য করেছিল।

২০০৯ সালে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে আসার পর জামায়াতের সঙ্গে সম্পৃক্ততা থাকার জেরে আরএসও ব্যাপক মাত্রায় অভিযানের মুখে পড়ে এবং এর প্রেক্ষাপটেই তারা গা ঢাকা দিতে বাধ্য হয়।

কিন্তু মিয়ানমার তার ভূখণ্ডে রোহিঙ্গা-সম্পর্কিত সহিংসতার জন্য আরএসওকেই দায়ী করে আসছিল।

২০১৬ সালের মিয়ানমারের সীমান্ত চৌকিতে যে আরসাই হামলা চালিয়েছিল তা বুঝতে বেশ সময় লাগে দেশটির সরকারের। প্রাথমিকভাবে ওই হামলার জন্য তারা আরএসওকেই দায়ী করছিল, কারণ তারা বুঝতে পারেনি যে আরসা ও আরএসও দুটি আলাদা সংগঠন।

rohingya 4.jpg
ব্যাংককে মিয়ানমার দূতাবাসের সামনে সামরিক অভ্যুত্থান ও অং সান সুচিকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ। ১ ফেব্রুয়ারি ২০২১। [জিতিমা লুকবুন/বেনারনিউজ]

শূন্যস্থান পূরণ

২০১৬ সালের হামলার পরের বছরগুলোতে আরসা বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির এলাকায় নিজেদের শক্ত ঘাঁটি তৈরি করেছিল।

কক্সবাজারের প্রতিনিয়ত সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্যের পেছনের মূল হোতা হিসেবে এখনো আরসাকেই দায়ী করেন পর্যবেক্ষকরা।

যদিও আরসা নানা সময়ে সন্ত্রাসের সঙ্গে নিজেদের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে এবং তাদের জনপ্রিয়তাকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো ব্যবহার করছে বলে দাবি করে।

বাংলাদেশ সরকার আরসার এই উত্থানের বিষয়টিকে শুরু থেকেই না দেখার ভান করে আসছিলে এবং শরণার্থী শিবিরে আরসার উপস্থিতির বিষয়টি প্রতিনিয়ত অস্বীকার করছিল।

রোহিঙ্গাদের মধ্যে আরসার মতো জঙ্গি গোষ্ঠী লুকিয়ে আছে এটি প্রকাশ্যে এলে প্রত্যাবাসন ব্যহত হতে পারে এমন ধারণা থেকেই সরকার এই বিষয়টিকে গোপন করছিল বলে ধারণা করা হয়।

কিন্তু পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে শুরু করে ২০২১ সালের মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর অভ্যুত্থানের পর।

অং সান সু চির অপেক্ষাকৃত গণতান্ত্রিক সরকারের রাতারাতি পতনের পর সামরিক জান্তার অধীনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের খুব কম আশা দেখেছিল বাংলাদেশ।

এদিকে মিয়ানমারে বিরোধীদলগুলো একটি বিকল্প প্রবাসী সরকার গঠন করেছে, যা জাতীয় ঐক্য সরকার (এনইউজি) নামে পরিচিত। এর সশস্ত্র শাখা, “পিপলস আর্মি”, মিয়ানমারের অনেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী এবং জাতিগত ও রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করারা লক্ষ্যে কাজ করছে।

কিন্তু এই ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রক্রিয়ার তারা আরসাকে অযোগ্য বলে ঘোষণা করেছে।

সেই প্রেক্ষাপটে, আরএসও তার দীর্ঘদিনের সুপ্ত অবস্থার অবসান ঘটিয়ে ২০২১ সালের মার্চে পুনরায় আবির্ভূত হয় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে থাকা পেইজগুলো থেকে এনইউজিকে সমর্থন দিয়ে বিবৃতি প্রকাশ করে।

ছায়া জাতীয় ঐক্য সরকারের বা এনইউজির রোহিঙ্গা বিষয়ক উপদেষ্টা অং কিয়াও মো আরএসওর সাথে যোগাযোগের কথা স্বীকার করেছেন।

“বিপ্লবের পর, আমরা অনলাইনে আরএসওর সাথে দেখা করেছি,” আরএফএ বার্মিজকে বলেন তিনি।

“তারা [আরএসও] বলেছিল তারা বিপ্লবে অবদান রাখছে, কিন্তু তারা তা করেনি,” বলেন তিনি।

মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী বা সীমান্তরক্ষীদের ওপর আরএসও আক্রমণ করেছে এমন দাবি পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টিতে সত্য নয়।

“তারা প্রচুর প্রোপাগান্ডা তৈরি করে,” পরিচয় গোপন রেখে বেনারকে বলেন দীর্ঘদিনের একজন পশ্চিমা বিশ্লেষক।

একটি ঘটনার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “অক্টোবরে, তারা দাবি করেছিল তারা লড়াইয়ের পরে মিয়ানমারের একটি সীমান্ত গার্ড পোস্ট দখল করেছে। কিন্তু পরে দেখা গেলো এটি একটি পরিত্যক্ত পোস্ট।”

rohingya 5.jpg
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবিরে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ের নেতা মুহিব উল্লাহ। ২৫ আগস্ট ২০১৯। [সুনীল বড়ুয়া/বেনারনিউজ]

সশস্ত্র সংগঠনে আগ্রহ নেই রোহিঙ্গাদের

শরণার্থী শিবিরের বেশিরভাগ রোহিঙ্গা আরএসওকে খুব বাজে দৃষ্টিতে দেখে। অপরদিকে রোহিঙ্গারা প্রকাশ্যে আরসাকেও বর্জন করেছে।

এ প্রসঙ্গে ইউরোপ-ভিত্তিক রোহিঙ্গা কর্মী রো নে সান লুইন আরএফএ বার্মিজকে বলেন, “অধিকাংশ রোহিঙ্গারা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মিকে (আরসা) একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসাবে বিবেচনা করেন।”

“আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি যে আমরা আরসাকে মেনে নিতে পারি না। আরএসও সুশৃঙ্খলভাবে কাজ করতে পারে কিনা তাও আমরা দেখব,” বলেন তিনি।

২০২১ সালে জনপ্রিয় রোহিঙ্গা নেতা মুহিব উল্লাহর হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি বাংলাদেশ সরকারকে আরসার বিরুদ্ধে কঠোর করে তোলে।

রোহিঙ্গাদের অধিকার আদায়ে সক্রিয় ব্যক্তিত্ব মুহিব উল্লাহকে আরসা জীবননাশের হুমকি দেওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের কাছে তিনি সুরক্ষা চেয়েছিলেন।

শরণার্থী শিবিরে নিজ সংগঠনের অফিসে তাঁকে হত্যার পর, তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রকাশ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠীকে দায়ী করে।

পরে পুলিশের তদন্তে দেখা যায়, শিবিরের মধ্যে তাঁর জনপ্রিয়তার কারণে আরসা তাঁকে হত্যা করেছে।

এই হত্যাকাণ্ডটি শরণার্থী শিবিরে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি করতে বাংলাদেশ সরকার ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে ফেলে।

সরকার যেহেতু আরসার ওপর কঠোর দৃষ্টি দিয়েছে তা আরএসওসহ অন্যান্য গ্রুপের জন্য মঙ্গলজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিন্তু শরণার্থী শিবিরে বাসিন্দারা এসব সশস্ত্র প্রতিরোধ আকৃষ্ট নন।

“আমরা প্রতিদিন হুমকির সম্মুখীন হই। আপনি কখনো জানেন না এরপর কী হবে,” কুতুপালং ক্যাম্পের রোহিঙ্গা শরণার্থী সাইয়েদ আলম আরএফএ বার্মিজকে বলেন।

“সশস্ত্র সংগঠনগুলোতে আমাদের ন্যূনতম আগ্রহ নেই। আমরা আমাদের দেশে ফিরে যেতে চাই এবং নিজেদের কাজে ফিরতে চাই,” বলেন তিনি।

 

প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন কক্সবাজার থেকে আবদুর রহমান, ঢাকা থেকে আহম্মদ ফয়েজ ও বেনারনিউজের সহযোগী প্রতিষ্ঠান রেডিও ফ্রি এশিয়া।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।