সৌদি সম্মেলনে অংশ নেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীসহ ৫৫টি মুসলিম দেশের প্রতিনিধিরা
2017.05.18
ঢাকা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী সপ্তায় ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়াসহ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের সাথে সৌদি আরবের রিয়াদে এক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে যাচ্ছেন, যেখানে বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদ মোকাবেলার বিষয়টি থাকবে আলোচনার মূল বিষয়।
সৌদি সরকার আয়োজতি তিনটি মূল অধিবেশনের দুই দিনের এই সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হবে মে মাসের ২০-২১ তারিখে রিয়াদে। এতে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইডোডো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাকসহ ৫৫টি মুসলিম দেশের প্রতিনিধিরা রোববার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে এক বৈঠকে মিলিত হবেন।
সম্মেলনের দাপ্তারিক ওয়েবসাইট অনুযায়ী, অংশগ্রহণকারীরা বৈশ্বিক পর্যায়ে সহিংস চরমপন্থা মোকাবেলায় “অধিকতর শক্তিশালী ও কার্যকর নিরাপত্তা সহযোগিতা গড়ে তোলার উপায়গুলো চিহ্নিত করবেন।”
গত জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর এটিই হবে ট্রাম্পের প্রথম বিদেশ সফর। ২১ মে যৌথভাবে তিনি এবং সৌদি বাদশা সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল-সৌদ রিয়াদে ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর কম্বেটিং এক্সট্রিমিস্ট আইডলজি’ উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া এবং বিশ্বের বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ ইন্দোনেশিয়াসহ সবগুলো দেশই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আইএস ও অন্যান্য জঙ্গি গোষ্ঠীর সাথে সম্পৃক্ত সন্ত্রাসবাদী হুমকির সম্মুখীন হয়েছে।
সৌদি আরবে প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন সফর বিষয়ে বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী জানান, সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় “কিছু প্রস্তাব উপস্থাপন করবেন।”
প্রধানমন্ত্রীর সম্ভাব্য প্রস্তাবের বিস্তারিত না জানালেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “আমরা আশা করি... প্রধানমন্ত্রী সেখানে জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সাফল্য তুলে ধরবেন।”
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি করে ১৮ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জঙ্গিবিরোধী বিভিন্ন অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০জন সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়েছে।
“ওই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে বৈশ্বিক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নতুন অংশীদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করা, সহনশীলতা ও সহানুভূতি বৃদ্ধি এবং শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রচেষ্টা জোরদার করা," বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
‘আমরা সৈন্য পাঠাব’
সৌদি-নেতৃত্বাধীন সন্ত্রাসবাদ বিরোধী সুন্নি মুসলিম প্রধান দেশগুলোর জোটে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়া দুটি দেশই যোগ দিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইরান এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করছে না। বরং, তেহরান সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ইয়েমেন ‘প্রক্সি যুদ্ধ’ চালিয়ে যাচ্ছে।
মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে জোটে যুদ্ধের জন্য সৈন্য মোতায়েন করেনি। তবে ইয়েমেনে মালয়েশিয় সৈন্য পাঠানোর কারণে দেশের ভেতরে সরকার কঠোর সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে। যদিও কর্তৃপক্ষের মতে সৈন্যরা সেখানে ‘মানবিক সহায়তা’ দেবার জন্য রয়েছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, মক্কা ও মদিনায় ইসলামের দুটি পবিত্র স্থাপনা হুমকির সম্মুখীন হলে বাংলাদেশ সৌদি আরবে সৈন্য পাঠাবে।
সৌদি-নেতৃত্বাধীন জোটে সৈন্য পাঠানোর বিষয়ে এটিই বাংলাদেশ সরকারের কোনো শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তির প্রথম মন্তব্য।
“যদি আমাদের সাহায্য চাওয়া হয়, সৌদি আরব আমাদের সহায়তা চাইলে আমরা অবশ্যই সৈন্য পাঠাব।” বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
বাংলাদেশে ৫৬০টি মসজিদ নির্মাণের জন্য সৌদি সরকার এক বিলিয়ন ডলার অনুদান দিতে রাজি হবার বাংলাদেশি দাবি সৌদি আরব নাকচ করে দিয়েছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে এড়িয়ে যান।
প্রসঙ্গত, গত ১১ মে সৌদি আরবের সংস্কৃতি ও তথ্য বিষয়ক মন্ত্রী ড. আওয়াদ আলাওয়াদ বেনারনিউজের কাছে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, “সৌদি আরব কখনই মসজিদ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশকে এক বিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়নি।”
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পরিকল্পনা মন্ত্রী মুস্তফা কামাল এর আগের কথার পুনরাবৃত্তি করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সৌদি বাদশাহর মধ্যে যে বৈঠকে বাংলাদেশে মসজিদ নির্মাণ বিষয়ে আলোচনা হয়, সেখানে তিনি উপস্থিত ছিলেন।
"সেখানে সৌদি প্রতিশ্রুতি ছিল- এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই," বলেন তিনি।
ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়ার অংশগ্রহণ
ইন্দোনেশিয়ায় সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ওসামা বিন মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল শাওইবি মঙ্গলবার জাকার্তা পোস্টে জানান, বিশ্বের সর্ব বৃহৎ মুসলিম অধ্যুষিত দেশ ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট উইডোডো সম্মেলনকালে সৌদি সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে দ্বিপাক্ষিক সভায় অংশগ্রহণ করবেন।
ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরমানাতা নাসির বৃহস্পতিবার ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা আন্তারাকে বলেন, “সবচে বৃহৎ মুসলিম জনগোষ্ঠী রয়েছে আমাদের দেশে, তাই আমাদের মতামত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি বলেন, “ইন্দোনেশিয়া দেখাবে কীভাবে ইসলাম, সংযম এবং গণতন্ত্র এখানে একসাথে অবস্থান করে,” বলেন অরমানাতা।
মালয়েশিয়ার জাতীয় সংবাদ সংস্থা বার্নামা জানায়, মে মাসের ১১ তারিখ সৌদি আরবের সংস্কৃতি ও তথ্য বিষয়ক মন্ত্রী মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সৌজন্য বৈঠককালে নাজিব রাজ্জাককে এই সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান।
মালয়েশিয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জানান, সম্মেলনে নাজিব নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসবাদের বিষয়ে আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন।
চলতি বছরে সৌদি বাদশা ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া, দুটি দেশেই সফর করেন। তাঁর সফরের সময় সৌদি আরবের সাথে দুটি দেশের সন্ত্রাসবাদ বিরোধী দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতামূলক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পাশপাশি বৈশ্বিক সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলার জন্য সৌদি আরব মালয়েশিয়ায় ‘কিং সালমান সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’ চালুর বিষয়ে সম্মত হয়।
মার্চের প্রথম দিকের যৌথ বিবৃতিমতে, এই পিস সেন্টারটির সাথে যুক্ত রয়েছে সৌদি ও মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, মালয়েশিয়ার ইসলামিক সাইন্স বিশ্ববিদ্যালয় এবং মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ।