জঙ্গিবাদে অর্থায়ন বন্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগের আহ্বান জানালেন শেখ হাসিনা
2017.05.22
ওয়াশিংটন ডিসি

জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় অস্ত্র ও অর্থ যোগান বন্ধে বৈশ্বিক উদ্যোগের আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশে সংবাদ সংস্থা (বাসস) জানায়, রোববার সৌদি আরবের রিয়াদে আরব-ইসলামিক-আমেরিকান সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা যে কোনো ধরনের চরমপন্থা ও সহিংসতায় ধর্মকে ব্যবহার বিচার্য মনে করি না।”
“বিশ্বে জঙ্গিবাদে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের শতকরা ৯৫ ভাগই মুসলমান,” ওই অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় বলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, জানায় হোয়াইট হাউসের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট।
তিনি বলেন, “জঙ্গি গোষ্ঠীর দ্বারা সাধিত ক্ষতি শুধু মৃত্যের সংখ্যা দিয়ে পরিমাপ করলে চলবে না, বরং প্রজন্মের পর প্রজন্ম মানুষের স্বপ্নকে ধ্বংস করে দেবার হিসাব দিয়ে এই ক্ষতির পরিমাপ করতে হবে।”
নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন মন্তব্যে মুসলিমদের কঠোর সমালোচনা করলেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবার পর ট্রাম্প তাঁর প্রথম বিদেশ সফরটি করলেন মুসিলম বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে পরিচিত সৌদি আরবে এই শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষেই।
“আমরা অবশ্যই সন্ত্রাসীদের হাতে অস্ত্র সরবরাহ ও অর্থের উৎস বন্ধ করতে চাই”, লিখিত বক্তব্যে বলেন শেখ হাসিনা।
উল্লেখ্য, সম্মেলনটির অন্যতম আলোচ্য বিষয় ছিল বৈশ্বিকভাবে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন বন্ধের উদ্যোগ গ্রহণ। সম্মেলন চলাকালে জঙ্গিবাদে অর্থায়ন ও পৃষ্ঠপোষকতা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।
চলতি মাসের ২০-২১ তারিখে সৌদি সরকার আয়োজতি দুই দিনের এই শীর্ষ সম্মেলনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, ইন্দোনেশিয়ার রাষ্ট্রপতি জোকো উইদোদো, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাকসহ ৫৫টি মুসলিম দেশের প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।
বাংলাদেশসহ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী সবগুলো দেশই সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর হামলার সম্মুখীন হয়েছে।
তবে মধ্যপ্রাচ্যে সৌদি আরবের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ইরানকে এই শীর্ষ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
“তরুণ মুসলিম ছেলে-মেয়েদের অবশ্যই সন্ত্রাসমুক্ত, নিরাপদ ও ঘৃণামুক্ত একটি পরিবেশে বড়ো হওয়ার সুযোগ প্রয়োজন,” বলেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।
বাসস জানায়, লিখিত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে সকল প্রকার চরমপন্থার বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ ও কার্যকরভাবে জঙ্গিবাদ দমনে তাঁর সরকারের সাফল্য তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জিম্মি করে ১৮ বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে জঙ্গিরা হত্যা করার পরবর্তী সময়ে সরকারের জঙ্গিবিরোধী অভিযানে এখন পর্যন্ত অন্তত ৭০জন সন্দেহভাজন জঙ্গি নিহত হয়েছে।
সৌদি আরবের বাদশা সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সউদ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ছাড়াও জর্ডানের বাদশা দ্বিতীয় আবদুল্লাহ, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল–সিসি, ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো ও মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজ্জাক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
শেখ হাসিনা তাঁর বক্তব্যে রিয়াদে ইসলামিক কাউন্টার টেররিজম সেন্টার প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়ার জন্য সৌদি বাদশাকে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হতে পেরে সন্তুষ্ট।
২১ মে যৌথভাবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও সৌদি বাদশা সালমান রিয়াদে ‘গ্লোবাল সেন্টার ফর কম্বেটিং এক্সট্রিমিস্ট আইডিওলজি’ উদ্বোধন করেন।
এ প্রসঙ্গে ট্রাম্প তাঁর বক্তব্যে বলেন, “সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বে, কিন্তু শান্তির পথ শুরু হলো এই পবিত্র ভূমি থেকেই।”