তাবলিগ জামাতে বিরোধের মধ্যেও বাংলাদেশে স্মরণকালের জমায়েত

জেসমিন পাপড়ি
2020.01.10
ঢাকা
200110_Ijtema_1000.JPG বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বে টঙ্গীর তুরাগ তীরে জুমার নামাজে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের একাংশ। ১০ জানুয়ারি ২০১৯।
[নিউজরুম ফটো]

একদিকে তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের বিরোধ, আরেকদিকে স্মরণকালের সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে ঢাকার অদূরে টঙ্গীতে শুরু হয়েছে ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমা, যা মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্মীয় সমাবেশ বলে পরিচিতি।

তাবলিগ জামাতের দুই অংশের সমঝোতা না হওয়ায় এবারও দুই দফায় ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম পর্বের ইজতেমা শুক্রবার শুরু হয়েছে, ১২ জানুয়ারি আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে এই পর্ব শেষ হবে।

কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করে লাখো মানুষ জড়ো হন ইজতেমা ময়দানে। ইজতেমার প্রায় পাঁচ দশকের ইতিহাসে এই পর্বেই সবচেয়ে বেশি লোকের জমায়েত হয়েছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা।

জাতীয় ইমাম সমাজ বাংলাদেশের মহাসচিব ও রাজধানীর চকবাজার মসজিদের ইমাম ও খতিব মিনহাজ উদ্দিন বেনারকে বলেন, “গত বছর একটা ষড়যন্ত্রকারী মহল ইজতেমাকে বানচাল করার ষড়যন্ত্র করেছিল। তাতে রক্তপাতও হয়েছিল। সেই তাড়না ও অনুভূতি থেকে এবার রেকর্ড সংখ্যক লোকের জমায়েত হয়েছে, যা গত ৫০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে।”

“আজকের জুমআ’র নামাজের সময়ে এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়েছে। যা ইজতেমার ইতিহাসে লক্ষ করা যায়নি,” বলেন তিনি।

তাঁর মতে, “ইজতেমা নিয়ে বিবাদের জবাব এটা। এর অর্থ হলো, বাংলাদেশে ইসলাম ও মুসলামান এবং ধর্মীয় কাজকে বাধাগ্রস্ত করা হলে এর গতি আরো বৃদ্ধি পাবে।”

ইজতেমার এই পর্বে ৩৭টি দেশ থেকে প্রায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার বিদেশি মেহমান এসেছেন বলেও উল্লেখ করেন এ আয়োজনের সাথে জড়িত ইমাম মিনহাজ উদ্দিন।

প্রথম পর্বের ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়কারী জহির ইবনে মুসলিম সাংবাদিকদের বলেন, এবার বেশি মুসল্লি থাকার কারণে বৃহস্পতিবার বাদ আসর থেকেই বয়ান শুরু হয়।

শুক্রবার ভোরে ফজরের নামাজের পর পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদ আলমের আমবয়ানের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পর্বের ইজতেমা শুরু হয়।

উল্লেখ্য, ১৯৬৩ সাল থেকে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হয়ে আসা বিশ্ব ইজতেমায় বিভিন্ন দেশ থেকে মুসল্লিরা অংশ নেন। পরে মুসল্লিদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় ২০১০ সাল থেকে দুই দফায় তিন দিন করে ইজতেমার আয়োজন করা হতো।

কিন্তু বিশ্ব ইজতেমা পরিচালনা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে মাওলানা মুহাম্মদ জুবায়ের আহমেদ ও দিল্লির মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী দুই পক্ষ তিন দিন ধরে ইজতেমার আয়োজন করছে। আগামী ১৭-১৯ জানুয়ারি একই স্থানে সাদ কান্ধলভীর অনুসারীরা ইজতেমা পালন করবেন।

বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মাওলানা আরশাদ রাহমানি বেনারকে বলেন, মাওলানা সাদের সাথে মূলত আকিদাগত (বিশ্বাসগত) বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। তাছাড়া ১৯৯৫ সাল থেকে বিশ্ব উপদেষ্টা পরিষদের মাধ্যমে তাবলিগ জামাতের কার্যক্রম চলে আসছিল। কিন্তু তিনি এই পরিষদকে না মেনে নিজেকে আমির হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেন। সেসব দ্বন্দ্ব এখনো বিদ্যমান।”

তিনি বলেন, এটা শুধু বাংলাদেশের ব্যাপার না। এটা বিশ্বব্যাপী তাবলিগ জামাতের সমস্যা। বিরোধের প্রভাব ইজতেমায় পড়েনি উল্লেখ করে মাওলানা আরশাদ বলেন, এবার ৪০ লাখ লোকের জমায়েত হয়েছে, যা রেকর্ড।

“তাঁর (সাদের) আকিদাকে বিশ্বের অধিকাংশ ওলামারা ভ্রান্ত বলে ফতোয়া দিচ্ছেন। সেটা যতদিন পর্যন্ত সংশোধন না হবে ততদিন পর্যন্ত এ দেশের ওলামারা মাওলানা সাদের উপস্থিতি মেনে নেবে না,” যোগ করেন তিনি।

ইজতেমা উপলক্ষে গত কয়েকদিন ধরে সারা দেশ থেকে দলে দলে এসেছেন মুসল্লিরা। ইজতেমায় কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। পুরো এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য মোতায়েন করা হয়।

ইজতেমা প্রাঙ্গণের প্রতিটি প্রবেশপথে মুসল্লিদের দেহ তল্লাশি করে ভেতরে ঢোকানো হয়।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মো. আনোয়ার হোসেন সাংবাদিকদের জানান, “ইজতেমা নিয়ে দুটি পক্ষের মধ্যে মতপার্থক্য থাকায় বেশি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত সার্বিক পরিস্থিতি সন্তোষজনক। আশা করছি শান্তিপূর্ণভাবে ইজতেমার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।”

নিরাপত্তা নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আয়োজকরাও।

এ বিষয়ে ইমাম মিনহাজ উদ্দিন বলেন, “মাঠের আশেপাশে প্রশাসনের কর্মকর্তারা যেভাবে নিরপত্তার চাদরে ঢেকে রেখেছেন তাতে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। তবে জায়গা না পেয়ে আশপাশের মাঠ, মসজিদ, স্কুল–কলেজ চত্বরে আমাদের সাথীরা অবস্থান করেছেন। আশা করি সেদিকে তাঁরা নজর রাখবেন।”

আয়োজকেরা জানান, এ বছর ইজতেমায় আগের চেয়ে বেশিসংখ্যক মুসল্লি যোগ দেবেন—এমন ধারণা থেকেই এবার খেত্তার সংখ্যা বাড়িয়ে ৯১টি করা হয়। তুরাগ নদের পশ্চিম পাড়ে অতিরিক্ত তিন একর জমিতে প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে।

শুক্রবার পর্যন্ত ইজতেমায় যোগ দেওয়া চার মুসল্লীর মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।