যুক্তরাষ্ট্রে পুরস্কৃত রোহিঙ্গা পরিবারের বাংলাদেশি নারী
2019.03.07
ওয়াশিংটন ডিসি

নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের অধিকার রক্ষায় সাহসিকতা নিয়ে কাজ করার স্বীকৃতি হিসেবে রোহিঙ্গা পরিবারের এক বাংলাদেশি নারীকে বৃহস্পতিবার পুরস্কৃত করল যুক্তরাষ্ট্র।
আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্বের আরো নয় নারীর সাথে বাংলাদেশি রাজিয়া সুলতানাকে ইন্টারন্যাশনাল উইমেন অব কারেজ (আইডব্লিউসি) ২০১৯ এ পুরস্কৃত করা হয়।
“বাংলাদেশের রাজিয়া সুলতানাকে বার্মায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য তাঁর নির্ভীক উদ্যোগ, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মানবাধিকার সুরক্ষার প্রচেষ্টা এবং রোহিঙ্গা নারীদের ওপর পদ্ধতিগতভাবে যৌন নিপীড়নের ঘটনা নথিবদ্ধ করার জন্য এই পুরস্কারে ভূষিত করা হচ্ছে,” রাজিয়াকে পুরস্কার দেওয়া প্রসঙ্গে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে।
অনুষ্ঠানে বিজয়ী দশ নারীর হাতে পুরস্কার তুলে দেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও এবং ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প।
রাজিয়াকে “বাংলাদেশি রোহিঙ্গা আইনজীবী, যিনি রোহিঙ্গা নারীদের পাচারের শিকার হওয়া থেকে রক্ষা করার জন্য লড়ছেন,” বলে উল্লেখ করেন মাইক পম্পেও।
মানবাধিকার ও নারী অধিকার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য সারা বিশ্ব থেকে প্রতি বছর নির্বাচিত নারীদের যুক্তরাষ্ট্র এই পুরস্কার দিয়ে থাকে।
২০০৭ সালে শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৬৫টি দেশের ১২০ নারী এই পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র প্রতি বছর আর্ন্তজাতিক নারী দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে থাকে।
“আমরা নিজেদের জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে সবাই জানি যে সাহসী নারীরা সব জায়গাতেই আছেন এবং সব জায়গাতেই তাঁদের প্রয়োজন,” অনুষ্ঠানে বলেন মাইক পম্পেও।
“যদিও তাঁদের বেশিরভাগকে কখনো সম্মানিত করা হবে না,” যোগ করেন তিনি।
রাজিয়া সুলতানা বাংলাদেশের নাগরিক হলেও রোহিঙ্গা পরিবারের সন্তান। ১৯৭৩ সালে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরে তাঁর জন্ম বলে জানায় পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইট।
এতে বলা হয়, পেশায় আইনজীবি রাজিয়া তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময় ব্যয় করেছেন একজন শিক্ষক ও মানবাধিকার কর্মী হিসেবে। ২০১৪ সাল থেকে তিনি সরাসরি রোহিঙ্গা নারীদের নিয়ে কাজ করছেন।
২০১৬ সাল থেকে তিনি ধর্ষণ ও মানবপাচারের শিকার রোহিঙ্গা নারীদের সাক্ষাৎকার নথিবদ্ধ করা শুরু করেন এবং রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর নিপীড়নের ঘটনার তথ্য নিয়ে ‘উইটনেস অব হরর’ এবং ‘রেপ বাই কমান্ড’ নামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
রাজিয়া ফ্রি রোহিঙ্গা কোয়ালিশন এর একজন সমন্বয়ক ও আরাকান রোহিঙ্গা ন্যাশনাল অরগানাইজেশন এর নারী বিভাগের পরিচালক।
“যে সকল নারীকে আমরা আজ সম্মানিত করছি, তাঁরা সাহসের প্রতীক, তাঁরা পৃথিবীর বিপজ্জনক কিছু অংশে মানবাধিকারের অগ্রদূত,” পুরস্কার পাওয়া নারীদের সম্পর্কে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মেলানিয়া ট্রাম্প।
তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি, সামনে এগিয়ে যাবার জন্য বেশিরভাগ সমাজে যে সকল গুণ প্রয়োজন তার মধ্যে অন্যতম হলো সাহস। সাহসই পরিবর্তন নিয়ে কথা বলা মানুষ থেকে পরিবর্তনকারী মানুষদের পার্থক্য নির্ধারণ করে।”
অনুষ্ঠানের কর্মসূচি থেকে জানা যায়, পুরস্কারপ্রাপ্তরা যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে ভ্রমণ করে সেখানকার সংগঠন ও বাসিন্দাদের সাথে নিজেদের অভিজ্ঞতা বিনিময় করবেন। পাশাপাশি, ভবিষ্যতে একসাথে কাজ করার কর্মপরিকল্পনাও করবেন এই নারীরা।