জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয় না দেওয়ার অঙ্গীকার প্রধানমন্ত্রীর
2016.06.22

গত কয়েকদিন ধরে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর জঙ্গি বিরোধী অভিযান ও বন্দুকযুদ্ধে একের পর এক সন্দেহভাজন ‘জঙ্গি’ নিহত হচ্ছে। এরই মধ্যে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্সের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে একটুও প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে শুধু ‘জিরো টলারেন্সের’ অঙ্গীকারই এ সরকার করেনি, বরং তা করে দেখাচ্ছে।
এদিকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন ইসলামি জোটে বাংলাদেশ যুক্ত হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। এতোদিন এ বিষয়টি নিয়ে এক ধরণের ধুম্রজাল থাকলেও গতকাল প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি খোলসা করলেন।
সরকারের পক্ষ থেকে এতোদিন বলা হচ্ছিল, মক্কা ও মদিনার দুটি পবিত্র মসজিদ কখনো আক্রান্ত হলে সেগুলো রক্ষায় প্রয়োজনে সেনা পাঠাবে বাংলাদেশ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী বললেন, সৌদি জোটে যোগ দেওয়ার কথা।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় হুইপ শহিদুজ্জামান সরকারের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের দৃঢ় ভূমিকা সব সময়ই ছিল। আমাদের একটা সন্ত্রাসবিরোধী ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে আমরা কোনো মতেই প্রশ্রয় দেব না।”
ওআইসির প্রতি আহবান
এসময় সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে বিশ্বের মুসলিমদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহবান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি সব সময় সারা বিশ্বের মুসলিম উম্মাহকে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান করি।”
তিনি ওআইসিতে (ইসলামি সম্মেলন সংস্থা) অংশ নিয়ে ঐক্যের কথা বলার প্রসঙ্গে উল্লেখ করেন, “আমি যতবার ওআইসিতে গিয়েছি, এ প্রসঙ্গটা ততবারই উত্থাপন করেছি। ওআইসি মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাতকালেও এ কথাটা বলেছি।”
সৌদি জোটে যোগ দেওয়া
এদিকে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াইযয়ের অংশ হিসেবে মুসলিম দেশগুলোর নেতা সৌদি আরবের বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ মুসলিম দেশগুলোর সমন্বয়ে একটি জোট গঠন করেছে। প্রতিষ্ঠাতা সদস্য হিসেবে তাতে যোগ দেয় বাংলাদেশ।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দূর করার এ জোটে সম্পৃক্ত হয়েছে। প্রায় ৪০টি মুসলিম দেশ এ জোটে যুক্ত। আর এ জোটের মাধ্যমে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে গোটা মুসলিম উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার একটি সুযোগ তৈরি হয়েছে।”
জঙ্গি দমনে সরকারের ভূমিকার প্রশংসা
বিশ্লেষকেরাও বলছেন, সন্ত্রাস দমনে বিশেষ করে জঙ্গিবাদ দমনে সরকারের ভূমিকা প্রশংসার দাবি রাখে। তবে এটা করতে গিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়গুলো নিয়ে কড়া সমালোচনা হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বেনারকে বলেন, “বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদকে উস্কে দেওয়া হয়েছে। সেদিক হিসেব করে বলা যায়, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে বর্তমান সরকার।”
তিনি বলেন, “আর একটি বিষয় খুব স্পষ্ট যে, সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে বিএনপি–জামায়াত চারদলীয় জোট সরকারের মত পৃষ্ঠপোষকতা এখন দেওয়া হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্য সে প্রমাণ দেয়।”
অর্থনৈতিক অঙ্গনকে সুদৃঢ় করতেও সন্ত্রাসমুক্ত দেশ প্রয়োজন বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা। আর এজন্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের বিকল্প নেই বলেও মনে করেন তারা।
এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশের ভূমিকা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্য প্রশংসার দাবিদার উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বেনারকে বলেন, “দেশে–বিদেশি বিনিয়োগ আহবান করার অন্যতম শর্ত হচ্ছে দেশে সুশাসন বজায় থাকা। নিরাপত্তা জনিত অবস্থান সুদৃঢ় থাকা। সে হিসেবে জঙ্গিবাদ দমনে সরকার যা করছে তা নিঃসন্দেহে প্রসংশনীয়।”