আবারও সমালোচনার মুখে টিআইবি, প্রশ্ন তুলেছেন সজীব ওয়াজেদ
2016.04.14

আবারও সমালোচনার মুখে পড়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ। সম্প্রতি পানামা পেপার্স কেলেঙ্কারিকে কেন্দ্র করে চিলির প্রেসিডেন্টের পদত্যাগের পর সংগঠনটির বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশের দাবি তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র ও তার তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।
জনপ্রতিনিধিদের মতই দুর্নীতি পর্যবেক্ষকদেরও সম্পদের হিসাব দাখিল করতে এবং প্রয়োজনে এ বিষয়ে আইন করার ওপর জোর দিয়েছেন তিনি।
টিআইবি’র বিরুদ্ধে সমালোচনা নতুন নয়। সংস্থাটি বিভিন্ন সময় সরকারের, সংসদ সদস্যদের দুর্নীতির রিপোর্ট প্রকাশ করে আসছে। যা নিয়ে সরকার সংস্থাটির উপর আগে থেকেই ক্ষুব্ধ।
সর্বশেষ সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলায় সংসদীয় কমিটির প্রধান সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত টিআইবির নিবন্ধন বাতিলে লিখিত সুপারিশ করেন। সেই ইস্যু স্তিমিত হতে না হতেই আবারও সমালোচনার মুখে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ।
এদিকে সরকারের এ সমালোচনাকে খুব বেশি আমলে নিচ্ছেনা টিআইবি। তাদের মতে, টিআইবি সম্পর্কে তথ্য ঘাটতির কারণেই এসব সমালোচনা হচ্ছে। তবে আইনি প্রক্রিয়া টিআইবি মেনে নিতে বাধ্য বলেও জানানো হয়।
নানা সমালোচনা থেকে টিআইবি’র উপর চাপ আছে সেটা পরিস্কার। তবে সরকার বিষয়টি নিয়ে কতদূর যাবে, তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না।
টিআইবি নিয়ে জয়ের প্রশ্ন
সম্প্রতি পানামা পেপার্সের ফাঁস হওয়া বিভিন্ন নথিতে কমপক্ষে পাঁচটি বিদেশি কোম্পানির সঙ্গে সম্পৃক্ততার তথ্য প্রকাশ হয় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল চিলির প্রেসিডেন্ট গনসালো দেলাবো’র বিরুদ্ধে। এরপর তিনি পদত্যাগ করেন।
ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুকে লিখেছেন, “টিআইবি’র সদস্যরা দুর্নীতিগ্রস্ত নয়; তাদের কোনো লুকানো সম্পদ নেই এবং তারা তাদের সব ট্যাক্স পরিশোধ করেছে- সেটা আমরা কীভাবে জানি?”
তিনি বিদেশে চিলির ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের প্রধানের সম্পদ লুকানোর বিষয়ে পানামা পেপার্সে তার নাম আসা ও পদত্যাগের বিষয়টি উল্লেখ করে বলেন, “এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল কতটা স্বচ্ছ এবং অন্যদের দুর্নীতিগ্রস্ত বলার অধিকার তাদের কীভাবে থাকে? আমাদের দেশে সকল সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রীদের সম্পদের বিবরণ দিতে হয়। টিআইবি নিজেদেরটা না দিয়েও নিজেদেরেকে তারা দুর্নীতির পর্যবেক্ষক দাবি করে। তাদের যদি সাহস থাকে, তবে অন্যের দুর্নীতির বিষয়ে মন্তব্য করার আগে তাদের স্বেচ্ছায় নিজেদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করা উচিৎ।”
টিআইবি’র সেই সাহসের প্রতি নিজেই সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি আরও লিখেছেন, “তাদের সেই সাহস রয়েছে কি না, তাই মনে হয় একটি আইন থাকা প্রয়োজন। যে কেউ দুর্নীতির বিষয়ে পর্যবেক্ষক হতে চাইবে তাদের নিজেদের সম্পদের বিবরণ দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করে নিতে হবে, ঠিক যেমন এমপিদের করতে হয়।”
তিনি প্রমাণ চেয়ে বলেন, “ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ তাদের সম্পদের বিবরণ প্রকাশ করে এটা প্রমাণ করুক যে তারা তাদের চিলি শাখার মতই দুর্নীতিগ্রস্ত নয়।”
‘তথ্য ঘাটতির কারণেই সমালোচনা, উদ্বিগ্ন নই’
সরকারের এই সমালোচনা নিয়মিতই বলছে টিআইবি। সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বেনারকে বলেন, “যে সরকারই ক্ষমতাই আসুক, আমাদের (টিআইবি) সমালোচনা করে, এতে আমরা অভ্যস্ত। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের বক্তব্যও তেমনি।”
তিনি বলেন, “টিআইবি’র আয়-ব্যয়ের প্রতিবেদন নিয়মিতভাবে সরকারের কাছে পেশ করা হয়। সরকারের অনুমতি সাপেক্ষে আমরা অর্থ আয়, ব্যয় বা উত্তোলন করি। সরকারের কাছে দেওয়া সে প্রতিবেদনের আরো বিশদ বিবরণী জনগণের জ্ঞাতার্থে ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়। টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালকসহ সবার সম্পদ বিবরণীও ওয়েবসাইটে দেয়া আছে। সুতরাং এ টিআইবি বা এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের সমালোচনা বা এমন বক্তব্য তথ্যের ঘাটতি ছাড়া আর কিছুই নয়।”
কিছুদিন আগে সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা নিয়ে প্রতিবেদনের কারণে টিআইবির লাইসেন্স বাতিলের দাবি করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের বক্তব্যের প্রেক্ষিতে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “যারা ক্ষমতায় থাকেন তাদের একাংশের সমালোচনা সহ্য করার মানসিকতা ঘাটতি থেকে এমন বক্তব্য আসে। “বিষয়টিকে পেশাগত বিড়ম্বনা বলেও আখ্যায়িত করেন নির্বাহী পরিচালক।
লাইসেন্স বাতিলের প্রেক্ষিতে ড. ইফতেখারুজ্জামান আরও বলেন, “লাইসেন্স বাতিলের প্রক্রিয়া আইনগত বিষয়। সেটি হলে আইনগত ভাবেই মোকাবেলা করা হবে। এতে আমরা উদ্বিগ্ন নই।”
সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, টিআইবির স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকার কথা না। কেননা, তাদের আয়-ব্যায়ের বিশদ সবার জন্য উন্মুক্ত।
টিআইবি সংশ্লিষ্টদের ব্যক্তিগত সম্পদের বিবরণী প্রসঙ্গে বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “সংসদ সদস্য বা নির্বাচনে যারা অংশ নেয়, তাদের সম্পদ বিবরণী প্রকাশের আইনি বাধ্য বাধকতা আছে। এর বাইরে এ নিয়ম কারও ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।”