হজযাত্রী পরিবহনে হিমশিম বাংলাদেশ, অনেকেরই যাত্রা অনিশ্চিত
2017.08.16
ঢাকা

হজের মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি থাকলেও বুধবার পর্যন্ত প্রায় অর্ধেক হজযাত্রী সৌদি আরবে পাঠাতে পারেনি বাংলাদেশ, পাশাপাশি এখন পর্যন্ত ভিসা পাননি কয়েক হাজার যাত্রী।
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাঁদের পাঠাতে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট বাতিল করে হজ ফ্লাইট বাড়িয়েছে সরকার।
এদিকে হজ যাত্রীদের এই অনিশ্চয়তার জন্য কিছু এজেন্সির গাফিলতিকে দায়ী করছেন অনেকেই।
“এজেন্সিগুলো অতি মুনাফার লোভে প্রচলিত নিয়ম-কানুন মানতে চায় না। এতে করে প্রতিবছরই শেষ মুহূর্তে হজযাত্রীরা এ ধরনের ভোগান্তিতে পড়েন,” বেনারকে বলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামি শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক (অনারারি) আ র ম আলী হায়দার।
গত সোমবার হজ ক্যাম্প পরিদর্শনকালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন, “সরকার স্বাচ্ছন্দ্যে ও নির্বিঘ্নে হজ পালনের ব্যবস্থা করতে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নিয়েছে। কারও গাফিলতি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড ও অসহযোগিতায় এ কার্যক্রম বিঘ্নিত হলে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
তবে হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন বেনারকে জানান, মক্কা ও মদিনায় থাকার নিয়ম অনুযায়ী বাড়ি ভাড়ার সঙ্গে মিল রেখে এজেন্সিগুলো হজযাত্রীদের জন্য শেষ দিকের ফ্লাইটে টিকিট করে। এ কারণেই শেষ দিকে চাপ বেড়েছে।
“এখন পর্যন্ত এক লক্ষ ২০ হাজার হজযাত্রীর ভিসা আমরা পেয়েছি। কালকের দিন আছে, আশা করি এর মধ্যে বাকিগুলো পেয়ে যাব,” বলেন শাহাদাত হোসাইন।
টিকিটের অপেক্ষায় অর্ধ লক্ষের বেশি
এ বছর মোট ১ লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন বাংলাদেশ থেকে হজ করতে সৌদি যাবেন। তবে বাংলাদেশ সময় বুধবার বিকেল চারটা পর্যন্ত ৬৯ হাজার ২৭৭ জন হজযাত্রী সৌদিতে পৌঁছেছেন বলে বেনারকে নিশ্চিত করেছেন মদিনায় বাংলাদেশ হজ অফিসের কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম রানা।
সে হিসেবে এখনো বাকি রয়েছেন ৫৭ হাজার ৮৫২ জন। এদের মধ্যে ৫১ হাজার ৬৭৩ জন যাত্রী ভিসাযুক্ত পাসপোর্ট নিয়ে টিকিটের অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানিয়েছে ঢাকার হজ অফিস। এ ছাড়া ভিসা সমস্যা মেটাতেও কাজ করে যাচ্ছে ধর্ম ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
শেষ দিকে যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে প্রয়োজনীয় এয়ারক্রাফট এমনকি অতিরিক্ত স্লট পাওয়াও দুষ্কর হবে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার হজ অনুষ্ঠিত হতে পারে ৩০ আগস্ট। সে হিসেবে আগামী ১৭ আগস্ট হজযাত্রীদের ভিসা দেওয়ার শেষ তারিখ ও ২৬ আগস্ট হজের শেষ ফ্লাইটের তারিখ নির্ধারণ করেছে সৌদি সরকার।
গত ২৪ জুলাই থেকে পরিবহন শুরু করে যাত্রীর অভাবে ইতিমধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ২২টি হজ ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। সৌদি এয়ারলাইনসও বাতিল করেছে পাঁচটি ফ্লাইট। এখন আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের পুনর্বিন্যাস করে শেষ মুহূর্তের চাপ সামলাতে হচ্ছে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থাকে। এতে কোটি কোটি টাকা মাশুল যেমন গুনতে হচ্ছে, বিড়ম্বনায় পড়েছেন নিয়মিত যাত্রীরা। দীর্ঘদিন আগে টিকিটি কেটেও নির্ধারিত সময়ে ভ্রমণ করতে পারছেন না তাঁরা।
শেষ মুহূর্তে হজযাত্রী পরিবহন করতে বাংলাদেশ বিমান গত সোমবার থেকে আগামী ২৬ আগস্ট পর্যন্ত বিভিন্ন আন্তর্জাতিক রুটের ফ্লাইট বাতিল করেছে।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) শাকিল মেরাজ বেনারকে বলেন, “হজযাত্রীদের কথা ভেবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে কাটছাঁট করে হজ ফ্লাইট বাড়ানো হয়েছে।”
বিমানমন্ত্রী জানান, “অতিরিক্ত ফ্লাইট পরিচালনা করতে ১৪ আগস্ট থেকে বিমানের আবুধাবির দুইটি, ব্যাংককের তিনটি, দোহার পাঁচটি, দুবাই’র একটি, কাঠমান্ডুর দুইটি, কুয়ালালামপুরের একটি, লন্ডনের তিনটি, মাস্কটের একটি, রিয়াদের তিনটি এবং দাম্মামের দুইটি ফ্লাইট বাতিল অথবা কমিয়ে আনা হবে। এ ছাড়া মালয়েশিয়া থেকে লিজকৃত একটি এয়ারক্রাফট ২০ আগস্ট থেকে হজযাত্রী পরিবহন করবে।”
সৌদি সরকারের কাছে অনুরোধ করে নতুন ১৪টি স্লটের (হজ ফ্লাইট অবতরণের অনুমতি) পায় বিমান। বিমানের সর্বশেষ হজ ফ্লাইট ২৬ আগস্ট এবং সৌদি এয়ার লাইনসের ২৭ আগস্ট।
এখনো ভিসা হয়নি কয়েক হাজার
এদিকে আগামীকাল বৃহস্পতিবার হজযাত্রীদের ভিসার জন্য ঢাকার সৌদি দূতাবাসে পাসপোর্ট জমা দেওয়ার শেষ তারিখ হলেও এখনো সাত হাজারের মতো পাসপোর্ট জমা দেয়নি এজেন্সিগুলো।
হজ ক্যাম্পের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বেনারকে জানান, এখনো ৬-৭ হাজার পাসপোর্ট জমা হয়নি। আমাদের ৬৩৫টি এজেন্সি। প্রত্যেকেরই দু’একটা-পাঁচটা-ছ’টা করে পাসপোর্ট বাকি রয়েছে। কালকের মধ্যে সেগুলো জমা দিলেও ভিসা হয়ে যাবে। সেই চেষ্টা আমরা করছি।”
হজে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা বরিশালের তোফাজ্জল হোসেন বেনারকে বলেন, “হজ ক্যাম্পে আসার পরে জানতে পারি আমাদের ভিসাই হয়নি। কয়েক দিন হলো ভিসা পেলেও শুনছি এজেন্সি এখনো টিকিট কাটেনি। আদৌ এবার হজে যেতে পারব কি না জানি না।”