শরণার্থী শিবিরে এক হাজার দোকান উচ্ছেদ, ক্ষতির মুখে রোহিঙ্গারা
2021.12.10
কক্সবাজার

কক্সবাজার উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা শিবিরে অবৈধভাবে গড়ে তোলা প্রায় এক হাজার অবৈধ দোকানপাট গত দুই দিনে উচ্ছেদ করেছন কর্মকর্তারা।
এ অভিযান অব্যাহত রেখে এসব জায়গায় রোহিঙ্গাদের জন্য বসতি গড়ে তোলা হবে বলে বেনারকে জানিয়েছেন অতিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার সামছু দ্দৌজা নয়ন।
তবে এই উচ্ছেদের কারণে অনেকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা।
বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি শিবিরে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। দিন দিন রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তাঁদের আবাসন সংকটও বাড়ছে।
“এমনিতেই কক্সবাজারের শিবিরগুলো খুবই ঘিঞ্জি পরিবেশে। অবৈধ এসব দোকানপাট গড়ে তোলার কারণে ক্যাম্পের পরিবেশ আরও ঘিঞ্জি হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের জন্য ঘর তৈরির জায়গা কমে যাচ্ছে,” শুক্রবার বেনারকে বলেন কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার সামছু দ্দৌজা।
অনেক আগেই রোহিঙ্গা শিবিরের অভ্যন্তরে গড়ে তোলা দোকানপাট ভেঙ্গে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, এখন তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে এবং ধারাবাহিকভাবে উচ্ছেদ অভিযান চলবে।
টেকনাফের জাদিমুরার দমদমিয়া এলাকায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীর মালিকানাধীন জমিতে অবৈধভাবে গড়ে তোলা ঘরবাড়ি উচ্ছেদের কথা জানিয়েছে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন- এপিবিএন।
রোহিঙ্গা শিবিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত এপিবিএন অধিনায়ক মো. নাঈমুল হক বেনারকে বলেন, বৃহস্পতিবার লম্বাশিয়া রোহিঙ্গা শিবিরসহ আশপাশের কয়েকটি ক্যাম্পে অবৈধভাবে গড়ে তোলা প্রায় সাড়ে চারশো দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়েছে। এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।
অবৈধভাবে গড়ে তোলা এসব দোকানের কারণে রোহিঙ্গাদের আবাসন সংকট বাড়ছে। পাশাপাশি ক্যাম্পগুলোর শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট হচ্ছে বলে জানান নাইমুল হক।
“রোহিঙ্গাদের মধ্যে এসব দোকানের দখল-বেদখল নিয়ে সংঘাত লেগে থাকে,” মন্তব্য করে নাঈমুল হক বলেন, “ক্যাম্পের অভ্যন্তরে অনেক সংঘাত ও হানাহানি ঘটছে এসব অবৈধ দোকান বা মার্কেট দখল-বেদখল নিয়ে। যে কারণে অবৈধভাবে গড়ে তোলা এসব দোকানপাট পর্যায়ক্রমে উচ্ছেদ করা হচ্ছে।”
নাম প্রকাশ না করার শর্তে উখিয়ার লম্বাশিয়ার এক রোহিঙ্গা নেতা বেনারকে বলেন, রোহিঙ্গারা ঘিঞ্জি পরিবেশে আছে, আবার যত্রতত্র এভাবে দোকান তৈরির কারণে ঘর তৈরির জায়গা কমে যাচ্ছে, এটাও ঠিক। কিন্তু দোকানগুলো অনেক রোহিঙ্গাকে আর্থিকভাবে সচ্ছল হতে সহায়তা করছে।
এই উচ্ছেদ প্রসঙ্গে এএফপিকে দেওয়া সাক্ষাতকারে আল আমিন (৩০) নামে এক ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গা বলেন, “তারা আমার দোকান ভেঙে দিয়েছে। এটাই ছিল আমার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উপায়। এখানকার আয় দিয়ে আমি পরিবারের চাহিদা মেটাতাম।”
এভাবে দোকানগুলো ভেঙে ফেলার কারণে হাজার হাজার রোহিঙ্গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানান আল আমিন।
অপর রোহিঙ্গা কসমেটিকস ব্যবসায়ী আবদুর রশিদ (২৪) বলেন, “আমার স্ত্রী গর্ভবতী। এই দোকানের আয়ের ওপর নির্ভরশীল আমার বাবা-মা।”
অন্যদিকে শিবিরের অভ্যন্তরে দোকানপাট উচ্ছেদ অভিযানকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন কক্সবাজারের স্থানীয় জনগোষ্ঠী।
কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আয়াছুর রহমানের মতে, দোকানপাট উচ্ছেদের কারণে “শিবিরগুলোতে সংঘাত, হানাহানি কিছুটা হলেও কমবে।”
রোহিঙ্গা শিবিরের বেশিরভাগ হানাহানির উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ইস্যুর মধ্যে দখল-বেদখল এবং আধিপত্য বিস্তার অন্যতম বলে বেনারকে জানান আয়াছুর।
“খাবার-দাবার, চিকিৎসা থেকে শুরু করে মানবিক সকল সুযোগ-সুবিধা সরকার এবং দাতাসংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের দেওয়া হচ্ছে। এত কিছুর পরও কেন তাদের অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ করে ব্যবসা করতে হবে?” প্রশ্ন রাখেন তিনি।