জঙ্গি হামলার শঙ্কায় অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফরে অনিশ্চয়তা

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.09.28
BD-cricket সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বাঁ থেকে বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গ্রেগ উইলকক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান। ২৮ সেপ্টেম্বর,২০১৫
বেনার নিউজ

অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের পক্ষ থেকে জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় তাদের বাংলাদেশ সফর অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। যদিও বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এমন আশঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়ে সাংবাদিকদের সোমবার বলেছেন, যেকোনো ধরনের হামলা ও নাশকতা মোকাবিলা করার ক্ষমতা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দাদের রয়েছে।

ক্রিকেট দলের নিরাপত্তার প্রশ্নে অস্ট্রেলিয়া থেকে ৪ সদস্যের একটি নিরাপত্তা পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশ সফর করছেন। তাদের পর্যবেক্ষণ রিপোর্টের ভিত্তিতে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করবে বলে বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার দূতাবাস জানিয়েছে।

দুটি টেস্ট খেলতে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের সোমবার বাংলাদেশে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু নিরাপত্তা ঝুঁকির কথা জানিয়ে গত শনিবার হঠাৎ করেই সফর পিছিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া।

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের ডিপার্টমেন্ট অব ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ট্রেড (ডিএফএটি) বাংলাদেশে ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতা জারি করায় সফর পেছানোর এই সিদ্ধান্ত হয়েছে।  

গত শুক্রবার ওয়েবসাইটে দেওয়া ডিএফএটির ওই নোটিশে বলা হয়, জঙ্গিরা বাংলাদেশে ‘অস্ট্রেলিয়ার স্বার্থের ওপর’ আঘাত হানার পরিকল্পনা করছে—এমন ‘নির্ভরযোগ্য তথ্য’ তাদের হাতে রয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধিদলের কাছে ওই নিরাপত্তা ঝুঁকির তথ্যের সূত্র বাংলাদেশ জানতে চেয়েছে। কিন্তু এটা জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন ওই দেশের প্রতিনিধিরা।

“আমরা আমাদের নিরাপত্তা প্রস্তুতির পাশাপাশি নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়ে তাদের কাছে কী ধরনের তথ্য আছে, তা জানতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তাঁরা এ বিষয়ে কিছু বলতে চায়নি,” বেনারকে জানান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ও সাংসদ নাজমুল হাসান পাপন।  


নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছে বাংলাদেশ

এদিকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল বাংলাদেশ সফরে এলে তাদের ভিভিআইপি নিরাপত্তা দেওয়া হবে। এরপরও দলটি যদি বাড়তি নিরাপত্তা চায়, তাও দিতে প্রস্তুত আছে বাংলাদেশ।

সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকে নিরাপত্তা বিষয়ে আলোচনা হয়। ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা প্রধান শন ক্যারলের নেতৃত্ব চার সদস্যের প্রতিনিধি দল এতে অংশ নেন।

“নিরাপত্তা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের প্রস্তুতি ও আশ্বাসের বিষয়গুলো আমরা অবগত হয়েছি। এটা অস্ট্রেলিয়া সরকার ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়াকে জানানো হবে,” বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার গ্রেগ উইলকক।

তিনি বলেন, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল বাংলাদেশে আসছে কি না, বৈঠকে এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা তাদের নেই।

“অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দল কবে আসবে বা আসবে কি না, এ বিষয়ে বৈঠকে কোনো আলোচনা হয়নি। বৈঠকে মূলত অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ কী ধরনের ব্যবস্থা নিচ্ছে, তা তুলে ধরা হয়েছে,” জানান নাজমুল হাসান।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাজমুল হাসান জানান, এ ধরনের নিরাপত্তা হুমকির বিষয়টি ষড়যন্ত্র কিনা, তা তিনি বলতে পারবেন না।


ষড়যন্ত্রের গন্ধ?

তবে সরকার দলীয় নেতাদের অনেকেই এর পেছনে ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছেন।

“বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের সফর নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি আন্তঃক্রিকেটিয় ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে। সকল ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তকে জয় করেই বাংলাদেশের ক্রিকেটকে এগিয়ে নিতে হবে,” জানান আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

সোমবার দুপুরে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির হলরুমে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে সুরঞ্জিত বলেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সব ধরনের জঙ্গি হামলা ও নাশকতা মোকাবিলা ও দমন করতে প্রস্তুত। তরাপরও অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের এই উদ্বেগকে ‘নাটকীয়তা’ বলে উল্লেখ করেন তিনি।

তবে জঙ্গিবাদ নিয়ে এই বাড়াবাড়ির জন্য সরকারকেও দায়ী করছেন কেউ কেউ।  

“২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি বিনা ভোটে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে তাদের ক্ষমতার অবৈধ মসনদ টিকিয়ে রাখার জন্য বিভিন্ন সময়ে দেশকে জঙ্গিবাদের তকমা লাগিয়েছেন। তারই অংশ হিসেবে আজ আমাদের চরম খেসারত দিতে হচ্ছে,” বেনারকে জানান ২০ দলীয় শরিক ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি—এনডিপির চেয়ারম্যান খোন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা।

তিনি বলেন, দেশে যদি গণতন্ত্র থাকত এবং জনগণের ভোটের অধিকার থাকত তাহলে অস্ট্রেলিয়ার সরকার এই ঘৃণিত অপবাদ দিয়ে তাদের সফর বাতিল করতে পারত না ।

আগামী ৯ অক্টোবর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ও ১৭ অক্টোবর মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ও শেষ টেস্ট শুরু হওয়ার কথা। সফরসূচিতে ৩ অক্টোবরে ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে বিসিবি একাদশের বিপক্ষে তিন দিনের একটি প্রস্তুতি ম্যাচও আছে। তবে ম্যাচগুলো নির্ধারিত তারিখে হবে কিনা তা এখনো জানানো হয়নি।

অস্ট্রেলিয়া শেষবার বাংলাদেশ সফরে এসেছিল ২০১১ সালে। আর ২০০৬ সালের এপ্রিলের পর থেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে কোনো টেস্ট খেলেনি তারা।

নাজমুল হাসান বলেন, “আগেও বলেছি, এখনো বলছি- বাংলাদেশ ইজ এ সেইফ কান্ট্রি ফর ক্রিকেট। এদেশে কয়েকদিন আগে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা খেলে গেছে। এখন তাদের না আসার মত কিছু এখানে ঘটেনি।”

তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও গত বছর বাংলাদেশ সফলভাবে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ও এশিয়া কাপ আয়োজন করে সুষ্ঠুভাবে সেগুলো শেষ করেছে। সেখানে এখনকার স্থিতিশীল সময়ে অস্ট্রেলিয়ার এই সিদ্ধান্ত বিস্ময়কর।



বিএনপির বক্তব্য

বাংলাদেশে ‘উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদের কোনো অস্তিত্ব’ নেই দাবি করে নির্ধারিত সময়ের আগে টেস্ট সিরিজ খেলতে অস্ট্রেলিয়া তাদের ক্রিকেট দলকে সফরে পাঠাবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বিরোধী দল বিএনপি ।

সোমবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন এই আশার কথা জানান।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ ক্রিকেট পছন্দ করে। এ দেশের মাটিতে কোনো ধরনের উগ্রবাদের তৎপরতা নেই।

“অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট বোর্ড যে তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তার শঙ্কা দেখছে তার কোনো বাস্তব প্রেক্ষিত আছে বলে আমাদের দল মনে করে না ,” জানান আসাদুজ্জামান।

তিনি বলেন, “আমরা আশা করব, অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দল তাদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন ।”

মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।