অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল না আসার ঘোষণায় দুই দেশই দুঃখিত

ঢাকা থেকে শাহরিয়ার শরীফ
2015.10.01
BD-cricket জঙ্গি হামলার আশংকায় শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট টিম বাংলাদেশে আসছে না। ১ অক্টোবর, ২০১৫
অনলাইন

শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সফরে না আসার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। জঙ্গি হামলার আশঙ্কায় এই সিদ্ধান্ত জানানো হলেও গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সরকার অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলে আসছিল।

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী জেমস সাদারল্যান্ড বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় বিকেলে আনুষ্ঠানিকভাবে এই সফর স্থগিতের কথা জানান। সফর স্থগিতের ঘটনায় ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করেন তিনি।

তবে দেশটির এমন সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশানে নিজের বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার এ সিদ্ধান্তে আমরা হতাশ এবং ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”

গত ২৮ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশ সফরে আসার কথা থাকলেও জঙ্গি হামলার আশঙ্কার কথা জানিয়ে সফরটি ঝুলন্ত অবস্থায় রাখে অস্ট্রেলিয়া। এরপরই দেশটির ক্রিকেট বোর্ড থেকে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ করতে বাংলাদেশে আসে।

সরকারের বিভিন্ন পর্যায় এবং নিরাপত্তা সংস্থা ও বিসিবির সঙ্গেও বৈঠক করে প্রতিনিধিদল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলকে ভিভিআইপি নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।

তারপরও অস্ট্রেলিয়ার এমন সিদ্ধান্তকে হতাশাজনক অ্যাখ্যা দিয়ে পাপন গতকাল আরও বলেন, “কেন তারা এই সফর নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে স্থগিত করল তা আমাদের এখনও অজানা।”

তবে অস্ট্রেলিয়া নিরপত্তা হুমকির উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের আসা বা না আসা নিয়ে এই টানাপোড়েনের মধ্যে গত সোমবার সন্ধ্যার দিকে গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ায় দুর্বৃত্তের গুলিতে ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার (৫০) নিহত হন। এরপর যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশে অবস্থানরত তাদের নাগরিকদের সতর্ক করে।

এর পাশাপাশি বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থানের কথা নতুনভাবে আলোচনায় আসে। যদিও সরকার এখন বলছে, দেশে জঙ্গিবাদের অস্তিত্ব নেই।   

“পুরো ব্যাপারটাই হতাশার। গত ছয় দিন ধরে ব্যাপারটা নিয়ে আমরা অনেক কাজ করেছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আপাতত ক্রিকেট দলের এই সফর স্থগিত ঘোষণা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার ছিল না,” জানান জেমস সাদারল্যান্ড।

অস্ট্রেলিয়ার এই ঘোষণায় ক্রিকেটপ্রেমি বাংলাদেশীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। এর পাশাপাশি সরকারের বিরুদ্ধেও কঠোর সমালোচনা হচ্ছে।

“বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি বিদেশি নাগরিকদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। পরপর কয়েকজন ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে। এর একটিরও সুরাহা হয়নি। কোনো ঘাতকের বিচার শুরু করা যায়নি,” বেনারকে জানান নিরাপত্তা বিশ্লেষক মুনীরুজ্জামান।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে বাংলাদেশের একটা যোগসূত্র স্থাপন হয়ে গেছে। ব্যাংককে বোমা হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ঢাকায় দুই সপ্তাহ নিরাপদে থেকে গেলেন। গত ১৩ আগস্ট হায়দরাবাদে যে বেশ কিছু জঙ্গি ধরা পড়েছিল, সেখানে বাংলাদেশি হুজির দুজন সদস্যেরও সন্ধান মিলেছে। সর্বশেষ ইতালীয় নাগরিককে হত্যা করা হলো।

“সরকার এত দিন বলে আসছিল যে জঙ্গিদের ব্যাপারে তাদের জিরো টলারেন্স, কিন্তু সে জন্য যে রকমের পরিবেশ বিরাজ থাকার কথা, তা দেখা যাচ্ছে না,” মত দেন মনীরুজ্জামান।


সরকার ও বিরোধীদলের পরস্পরবিরোধী অভিযোগ

অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের সফর স্থগিত এবং ইতালির নাগরিক হত্যার ঘটনায় বাংলাদেশে জঙ্গি তৎপরতার বিষয়টি ফের জনগণকে উদ্বিগ্ন করেছে। বিরোধী দল বিএনপি এ নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ব্যর্থতার অভিযোগ তুলেছে।

“সরকার যে ‘জঙ্গিবাদের ফাঁদ’ সৃষ্টি করেছিল, সেই জঙ্গিবাদের হামলায় তারা আজ সারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে, তাদের গদি নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে,” বেনারকে জানান বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব হোসেন।

তিনি বলেন, জনগণ যখন কথা বলতে পারে না, তখন কিন্তু জঙ্গিবাদের উদ্ভব হয়।

অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য বিএনপি–জামায়াতের নেতৃত্বাধীন জোটকে দায়ি করা হচ্ছে। এ নিয়ে সরকার ও বিরোধীপক্ষের পরষ্পরবিরোধী অভিযোগ রয়েছে।


পরবর্তিতে খেলা অনুষ্ঠানের ব্যাপারে দুই দেশের আশা

‘সুবিধাজনক সময়ে’ এই সফর আবার অনুষ্ঠিত হবে বলে সাদারল্যান্ড অবশ্য আশাবাদী। তিনি বলেন, “আমরা এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করব। আমরা একসঙ্গে বসেই সিদ্ধান্ত নেব আবার কবে এই ক্রিকেট সিরিজের জন্য সময় বের করা যায়।”

ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার প্রধান নির্বাহী এই সফর স্থগিতের জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট ও এ দেশের ক্রিকেট সমর্থকদের প্রতি নিজেদের সহানুভূতির কথা জানান, “আমরা বাংলাদেশের ক্রিকেট ও ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রতি সহানুভূতিশীল। কিন্তু আমাদের খেলোয়াড়দের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এ ছাড়া আর আমাদের কিছুই করার ছিল না।”

নাজমুল হাসানও জানান, পরবর্তীতে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে সিরিজের নতুন দিনক্ষণ ঠিক করা হবে। তবে তিনি বলেন, “এই সফর স্থগিতের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না। বাংলাদেশ সর্বদাই ক্রিকেট খেলুড়ে, সব দেশের জন্যই নিরাপদ।”


মন্তব্য করুন

নীচের ফর্মে আপনার মন্তব্য যোগ করে টেক্সট লিখুন। একজন মডারেটর মন্তব্য সমূহ এপ্রুভ করে থাকেন এবং সঠিক সংবাদর নীতিমালা অনুসারে এডিট করে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে মন্তব্য প্রকাশ হয় না, প্রকাশিত কোনো মতামতের জন্য সঠিক সংবাদ দায়ী নয়। অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হোন এবং বিষয় বস্তুর প্রতি আবদ্ধ থাকুন।