বায়ুদূষণ রোধে গাছ লাগাবে সিটি করপোরেশন
2016.03.31

এক গবেষণায় দেখা গেছে, দূষিত বাতাস সেবনের ফলে রাজধানী ঢাকার ২৫ শতাংশ মানুষ বায়ু দূষণের শিকার। বিষাক্ত বাতাসে দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তাদের ফুসফুস। শিশু থেকে বৃদ্ধ কেউই বায়ু দূষণের ক্ষতি থেকে বাদ পড়ছে না।
পরিবেশের উন্নতি না হলে ভবিষ্যতে ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা গবেষকদের। বিষয়টি মাথায় রেখে ভবিষ্যৎ সবুজ ও পরিচ্ছন্ন রাজধানী গড়তে আগামী দুই বছরে প্রায় সোয়া তিন লাখ গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।
তবে পরিবেশবাদীরা বলছেন, ঢাকা শহর সবুজায়নে শুধু মেয়র বা সরকারের মুখাপেক্ষী হলে চলবে না। ব্যক্তিগত উদ্যোগেও গাছ লাগাতে হবে। প্রত্যেক নাগরিককে নিজের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে শহর দূষণমুক্ত করতে হবে।
গবেষণা যা বলছে
যানজটমুক্ত, পরিবেশবান্ধব, দূষণমুক্ত, কাঙ্ক্ষিত ও স্বপ্নের ঢাকা মহানগর গড়ার লক্ষ্যে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটির আরবান ল্যাব বিভিন্ন বিষয়ের ওপর গবেষণা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবার ‘নাগরিক স্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব’ শীর্ষক গবেষণার পরিচালনা করে বিশ্ববিদ্যালয়টি।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) যৌথ আয়োজনে পরিচালিত ওই গবেষণার ফলাফল তুলে ধরা হয়। এতে দেখা যায়, ঢাকা শহরের ২৫ শতাংশ মানুষই বায়ুদূষণের কারণে এজমা, নিউমোনিয়ার মতো কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতি চারজন শিশুর একজনের ফুসফুসই এসব কোনো না কোনো রেগে আক্রান্ত।
অনুষ্ঠানে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. রুহুল আমিন। তিনি বলেন, এ গবেষণার আওতায় ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকার প্রায় পাঁচ শ জনের ফুসফুস পরীক্ষা করার হয়েছে, যাদের বয়স ১০ থেকে ৪০ বছর।
নামে একটি ওয়েব সাইটের উদ্বোধন করেন মেয়র আনিসুল হক। যেখানে ঢাকা শহরের বায়ু ও শব্দ দূষণের বিস্তারিত তথ্যসহ দৈনন্দিন ঢাকা শহরের পরিবেশ দূষণের তথ্য পাওয়া যাবে।
এতে দেখা যায়, ৭৬ দশমিক ৮২ শতাংশ মানুষের ফুসফুস স্বাভাবিক ও বাকি ২৩ দশমিক ৪৭ শতাংশ মানুষের ফুসফুস অস্বাভাবিক অর্থাৎ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত।
ওই গবেষকের মত হচ্ছে, বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে গ্রিন-কেমিস্ট্রির নীতিমালার ভিত্তিতে শিল্পায়নের ব্যবস্থা করা জরুরি। একই সঙ্গে বায়ু দূষণ বিষয়ে সকলকে সচেতন করতে হবে।
“রাজধানী ঢাকায় বায়ু দূষণের মাত্র দিনদিন বাড়ছে। স্বাভাবিকের চেয়ে ঢাকার বাতাসে কয়েকশ গুন বেশি দূষক রয়েছে, যা নিশ্বাসের সঙ্গে মানুষের শরীরে প্রবেশ করে তাকে একটু একটু করে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে,” বেনারকে জানান বিশিষ্ট নগর ও পরিবেশবিদ স্থপতি ইকবাল হাবিব।
এর জন্য অপরিকল্পিত নগরায়ণকে দায়ী করে ইকবাল হাবিব বলেন, রাজধানী ঢাকায় সুষ্ঠু পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকালে কোটি মানুষের পয়োবর্জ্য ওপরে উঠে আসে। যা গ্রীষ্মকালে ধুলোয় পরিণত হয়। আর এ ধুলো পরে বাতাসের সঙ্গে মিশে মানুষের নিশ্বাসে প্রবেশ করে।
ঢাকা শহরকে ঘিরে থাকা হাজারো ইটভাটার কারণে শুষ্ক মৌসুমে প্রচুর ধুলোর সৃষ্টি হয় বলেও জানান তিনি।
এ পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে নগর সবুজায়ন জরুরি উল্লেখ করে ইকবাল হাবিব বলেন, এ কাজে মেয়র বা সরকারের মুখ চেয়ে থাকলে চলবে না। ব্যক্তিগত উদ্যোগে গাছ লাগাতে হবে। নিজের সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই এটা করতে হবে।
বায়ু দূষণ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় অধ্যাপক ব্রিগেডিয়ার (অব.) আব্দুল মালিক অনুষ্ঠানে বলেন, সালফার ডাই অক্সাইড, কার্বন মনক্সাইড, মার্কারি ও লেডের মতো ভারী পদার্থ বাতাসে মিশে যাচ্ছে। এগুলো ফুসফুস ও হৃদ্রোগ, যকৃতের সমস্যা ও গর্ভবতী মায়েদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
সোয়া ৩ লাখ গাছ লাগানো হবে
একই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র জনাব আনিসুল হক বলেন, “ভবিষ্যতে ভূমিকম্প হওয়ার আশঙ্কায় আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু ফুসফুস আক্রান্তের কারণে প্রতিদিন এই শহরের শতকরা ২৫ ভাগ শিশুর জীবনে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়ে যাচ্ছে। এর অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। তবে দূষিত বাতাসই সবচেয়ে বড় কারণ। ফুসফুস আক্রান্ত শিশুকে হয়তো সারা জীবনেই এই অভিশাপ বয়ে বেড়াতে হবে।”
আনিসুল হক বলেন, শিশুসহ সব মানুষের বাসযোগ্য করে তোলার জন্য ঢাকা মহানগরকে গ্রিন ও ক্লিন করা হচ্ছে। এ জন্য এখানে আগামী ২ বছরে তিন লাখ ২৫ হাজার গাছ লাগানোসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামী ২ বছরের মধ্যে ঢাকা বদলে যাবে। ১ বছরের মধ্যে ঢাকা মহানগরের কোথাও খোলা জায়গায় আবর্জনা পড়ে থাকবে না।
তবে সরকারের পক্ষে কোনো কিছুই একা করা সম্ভব নয়—মন্তব্য করে তিনি বলেন, প্রত্যেক নাগরিককে এগিয়ে আসতে হবে।